যে কারণে জন্মদিন পালন করেন না ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ০৮ মে ২০২০

২০০৩ সাল পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। তখন ২৫ বছরের টগবগে যুবক মো. জাহিদ আহসান রাসেলের জন্মদিনটা ঘটা করেই পালন হতো বাসায়। ৮ মে ছেলের জন্মদিনে কেক কাটা থেকে শুরু করে কত আয়োজন করতেন বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা। গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এলাকার বাসাটি তখন মুখরিত হয়ে উঠতো রাসেলের জন্মদিন ঘিরে।

২০০৪ সাল থেকে বদলে গেল মো. জাহিদ আহসান রাসেলের জীবনের দৃশ্যপট। সন্ত্রাস নামের একটা ঝড় এলোমেলো করে দিল সবকিছু। ওই বছর ৭ মে প্রকাশ্য দিবালোকে তার বাবা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা এবং গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ আহসানউল্লাহ মাস্টারকে নির্মমভাবে খুন করে বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে একদল সন্ত্রাসী।

দীর্ঘ ১৬ বছর পার হলেও আহসানউল্লাহ মাস্টারের হত্যাকারীদের বিচার কার্যকর হয়নি। তাই তো পিতার শাহাদাতবার্ষিকীতে কেঁদে কেঁদে হত্যাকারীদের বিচার চাইতে হয় বাবার সংসদীয় আসনে চতুর্থবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলকে।

বাবার মৃত্যু হয়েছে ৭ মে। পরের দিন ৮ মে জন্মদিন মো. জাহিদ আহসান রাসেলের। ২০০৪ সাল থেকে জন্মদিনটা অন্যসব দিনগুলোর মতোই হয়ে গেছে তার। এই দিনটি এলেই তিনি চুপ হয়ে যান। সারাদিন নিজেকে রাখেন ঘরবন্দি। কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা তিনি আর পছন্দ করেন না। ‘শুভ জন্মদিন’ শুভাকাঙ্ক্ষীদের মুখের এই শুভেচ্ছাটুকুও তাকে এখন আনন্দ দেয় না।

সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদ-তাই অসংখ্য ভক্ত মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপির। তাদের সবাই তো আর জানেন না পিতার মৃত্যুদিনের পরদিন বলে নিজের জন্মদিন পালন করেন না রাসেল। তাই অনেকে বাসায় নিয়ে আসতে পারেন ফুল, মিষ্টি, উপহার। এসব এড়িয়ে থাকার জন্য সরকারি বাসভবন ছেড়ে আজ আছেন অন্য একটি বাসায়। কারণ, কেউ যেন তাকে না পান। স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি হয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন।

‘২০০৪ সাল থেকে আমি জন্মদিন পালন করি না। এই দিনটায় ঘরের মধ্যেই থাকি। কারণ, কেউ ফুল দিলে, উপহার দিলে আমি বিব্রত হই। বলতে পারেন পছন্দই করি না। কিন্তু অনেকে আমাকে ভালোবেসে বাসায় চলে আসতে পারেন শুভেচ্ছা জানাতে। তাই এই দিনটিতে আমি অন্য বাসায় থাকি। যে বাসা বেশি কেউ চিনেন না। বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর পরদিন আমার জন্মদিন বলে কোনো আনুষ্ঠানিকতা আমার অপছন্দ’-বলছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

বাসায় অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক রান্নাবান্না হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ বছর হয়ে গেল বাবা মারা গেছেন। আমি কিছু করি না, পছন্দ করি না সেটা আমার স্ত্রীসহ সবাই জানে। তাই তো অন্য দিনগুলোর মতোই রান্নাবান্না হয়। কেক কাটা হয় না, জন্মদিনের কোনো আবহ থাকে না। এক কথায় আলাদা কিছুই না। আলাদা বলতে এতটুকুই যে, আমি অনেকটা চুপচাপ বাসায় বসে সময় কাটাই।’

কয়জন ভক্তই বা জানেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তার জন্মদিন পালন করেন না এবং এই দিনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা হলে তিনি বিব্রত হন? তাই তো শত শত ভক্ত ফেসবুক সয়লাব করে ফেলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর জন্মদিনে নানাভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে।

যারা এভাবে আপনাকে শুভেচ্ছা জানান তাদের জন্য কি বক্তব্য? ‘ফেসবুকে অনেকে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেক কথা লিখেছেন, লিখছেন। অনেকে ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ মোবাইলে বার্তা পাঠাচ্ছেন শুভেচ্ছা দিয়ে। অনেকে লিখিতভাবেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আসলে সবাই ভালোবেসে এ কাজগুলো করছেন। আমি সামনাসামনি শুভেচ্ছা নিতে বিব্রতবোধ করি। তবে যারা বিভিন্নভাবে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি’-বলছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।