কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাজনীতিকে কলুষিত করছে : নোমান


প্রকাশিত: ০৫:৪৫ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে তা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গণকে কলুষিত করছে বলে মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি মনে করেন, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সেখানে ছোট বড় ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব ইতিহাসের কাছে বিচ্ছিন্ন নয়। এখানে সে ধরনের আলোচনা হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে সহনশীল হতে হবে। সম্প্রতি জাগোনিউজের সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন নোমান।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তিগতভাবেই উপলব্দি করছিলেন রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। গত বিএনপি জোট সরকারের সময় মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তার প্রত্যাশা-প্রাপ্তি কেমন দেখছেন- জবাবে জাগোনিউজকে বলেন, সেই চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, স্বৈরতন্ত্রের ফাঁদে দেশ। ফ্যাসিবাদের দিকে চলে গেছে। বর্তমান সরকার একটা ফ্যাসিবাদী সরকার। যেখানে জনগণের ভোট দেয়ার স্বাধীনতা নেই। সংবিধানে বিরোধীদলের যেই স্পেসটা থাকে তা ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। মিছিল মিটিং বক্তব্য দেয়ার যে অধিকার সেটা এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। তবে সেটা আইনের মাধ্যমে নয়। জোর করে। স্বাধীনতার পর স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখতে পারবো, গণতন্ত্র দেখবে পাবো এরকম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এই সবকিছুই এখন হুমকির মুখে।

নোমান জানান, স্বাধীনতার সময় বর্তমান সরকার  (আওয়ামী লীগ) তখনকার নেতৃত্বে ছিল। তবে তারা স্বাধীনতার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দেয়নি। না দেয়ার পেছনে তাদের মাঝে যে দুর্বলতা এই দুর্বলতার কারণেই জিয়াউর রহমানেরকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেনে নিতে চায় না। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকৃতি দিলেও শেখ মুজিব ছোট হয় না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কেড়ে নেননি। ঘোষণা করেছেন। সেদিন জনগণের চাহিদা ছিল, রাজনৈতিক শুন্যতা ছিল সেই শুন্যতা পূরণ করে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা তার নিজের কোন লাভে নয় অথবা তিনি কোন লাভবান হননি। দেশের মানুষ লাভবান হয়েছে। তার কারণেই স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পেয়েছিলাম।

অনেকেই বলছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি, এর দায় কাদের ওপরে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই ৭১ সালের পর থেকে বর্তমানে যে আওয়ামী লীগ রয়েছে তারাই এর জন্য দায়ী। তারা এখন সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। সবত্র দুর্নীতি করেছে। গণতান্ত্রিক যে সংস্কৃতি এটা তাদের কারণে লুপ্ত হয়ে গেছে।
 
বর্ষিয়ান এই নেতা বলেন, আমার দায় আছে বিএনপিরও দায় আছে। আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পেলাম। যে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ পেলাম সেই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনগণের জন্য আন্দোলন করতে হবে। সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং রাষ্ট্রের যে দুরাবস্থা, যে দুর্নীতি এর বিরুদ্ধে অবিরাম আন্দোলন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা অর্থনৈতিক মুক্তি এবং জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের।

আ.লীগকে দায়ী করছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধ হিসেবে আপনার ব্যক্তিগত কোনো দায় আছে কি না? এই প্রশ্নের জবাবে বলছিলেন নোমান।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে যে আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল বিএনপি কি সেটি করতে পেরেছে? জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আন্দোলন বলতে জনবিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সবকিছু মিলিয়েই আন্দোলন, সেই আন্দোলন হচ্ছে। জোয়ার ভাটাকে আমরা যেভাবে দেখি আন্দোলনকেও সেভাবে দেখতে হবে। কখনো আন্দোলন জোয়ারে আবার কখনও ভাটায়। আমাদের মনে হতে পারে উপরের কাঠামোতে আন্দোলন নেই, কিন্তু আমি সেটা মনে করি না।

আমি মনে করি, আন্দোলন আছে। জনগণের ভেতরে যেহেতু এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার তীব্র আকাঙ্খা আছে সেটা মিছিলের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন নয় মাসের যুদ্ধে বোঝা গেছে যে, দেশের সব মানুষই স্বাধীনতা চেয়েছে, কিন্তু কিছু মানুষ ছাড়া। তাদের ভেতরে যেমন মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা ছিল।

তাদের যে ইচ্ছা তা তারা প্রকাশ করতে পারছে না। কিন্তু তাদের ভেতরে সেটা রয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উপলব্দি করি তাদের সেই ভেতরের বিষয়গুলো যখন সংগঠিতভাবে রুপ পাবে তখন আন্দোলন জয়যুক্ত হবে।

স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে আ.লীগ বিএনপি যে রাজনীতি করছে তা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি কিনা? জানতে চাইলে বলেন, এক কথায় এটাকে শেষ করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা ছিল তারা অবশ্যই ইতিহাস থেকে চিহ্নিত। তাদের সাথে নির্বাচনে অথবা কোনো আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সেই বিতর্কে আমি যেতে চাচ্ছি না। একজন মুক্তিযোদ্ধা তার যে অর্জন সেটা মন্ত্রীর চেয়ে অনেক বেশি। মুক্তিযোদ্ধা দ্বিতীয়বার হওয়া যাবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা না হলেও মন্ত্রী হওয়া যাবে। কিন্তু কেউ ইচ্ছা করলে মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবে না। কাজেই এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা অনেক উপরে।

মুক্তিযোদ্ধাদের অর্জনকে কাজে লাগিয়ে আমরা যদি এগিয়ে যেতে পারতাম, একাত্তর সালের পরে বাকশাল না করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে না নিয়ে দেশে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম এবং তখনকার সরকার যদি গণতান্ত্রিক হতো। তাহলে আজকে যে সংকট আমরা দেখছি এই সংকট হতো না।

আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যেতে পারতাম। নির্বাচনে হয়তো কোন দল হারতো এবং প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে দেশ গড়ে উঠতো।

স্বাধীনতা বিরোধীদের কি দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে? জিজ্ঞাসা করলে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জানান, ৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা আজকে ২০১৪ সালে যদি রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, গণতন্ত্র হত্যা করে। তাহলে তাদের বক্তব্য জনগণ গ্রহণ করবে না। যাদের বয়স ৪২/৪৩ বা ৫০ বছর ছিল তারা তো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। কাজেই যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করছে তারা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আজকে কলাবোরেটর হতে পারে। কলাবোরেটর মানে কি? কলাবোরেটর মানে যদি আপনি আপনার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্ব বিকিয়ে দেন। আপনি যদি এমন কোনো পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেন। যে পররাষ্ট্রনীতি আপনার আমার সার্বভৌম জাতি হিসেবে আমার বেল্টে যায় কলাবোরেট করে। সেই কর্মকাণ্ডগুলো আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। আজকে ৭১ সালে যুদ্ধ করলেও তাদের মুক্তিযোদ্ধা বলবেন না। আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে। আমি সেটা মনে করি না।

মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এদের নিয়ে বর্তমানে যে রাজনৈতিক বির্তক চলছে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যে যেই কর্মকাণ্ড করেছে সেখানে পক্ষে বিপক্ষে অবারিতভাবে চলতে থাকবে। সেখানে ছোট বড় ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব ইতিহাসের কাছে বিচ্ছিন্ন নয়। এখানে সে ধরনের আলোচনা হতে পারে। তবে সহনশীল হওয়া দরকার। রাজনৈতিক ভাবে সমালোচনার প্রয়োজন। রাজনীতি বিচ্ছিন্ন সমালোচনা বা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গণকে কলুষিত করছে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।