সালিশের নামে পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০২:৫৯ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় সালিশের নামে ইউপি সদস্যের নির্দেশে পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত রেশাদ খলিফা ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতেই ‘শাস্তি’ হিসেবে এ অপমানমূলক ঘটনা ঘটানো হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যায়— লাঠি হাতে রেশাদ খলিফা দাঁড়িয়ে আছেন, আর নাপিত মাথা ন্যাড়া করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এনিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে শুক্রবার কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে শনিবার রাতে মনিরের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ানের মধ্যে আবারো তর্ক ও মারামারি হয়। এর জের ধরে রোববার সকালে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে মধ্য চতলাখালীর খুতির বাজার এলাকায় সালিশ বসানো হয়। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে তিনি পাঁচ তরুণকে ‘বখাটে’ আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে নিজেই নাপিত ডেকে এনে প্রকাশ্যে মাথা ন্যাড়া করান।

সালিশের নামে পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করলেন ইউপি সদস্য

ভুক্তভোগীরা হলেন- রাব্বি (১৮), রিয়ান (২১), রাতুল (১৭), শাকিল (১৯) ও নয়ন সরদার (১৮)।

ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন, ‘রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি থামাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে মেম্বার আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। গিয়ে দেখি, তিনি নাপিত এনে দুইজনের চুল কেটে দিচ্ছেন। অনুরোধ করেও রেহাই পাইনি।’

আরও পড়ুন-
পুলিশে সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, থমথমে ইপিজেড
গোপালগঞ্জে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতিসহ ৪৯ নেতার একযোগে পদত্যাগ
ফেনী সীমান্তে কোটি টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ

তার মা ঝর্ণা বেগম বলেন,‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি, শুধু মারামারি থামিয়েছে। অথচ মেম্বার নিজে উপস্থিত থেকে তার মাথা ন্যাড়া করেছে। এটা আমাদের জন্য চরম অপমানজনক।’

অপর ভুক্তভোগী রাব্বি বলেন, ‘রিয়ান ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু সালিশে আমাদের সঙ্গে আরও তিনজনের চুল কেটে দিয়েছে। ওরা নিরপরাধ ছিল।’

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ছিলাম না।’

ভিডিওতে আপনি ছিলেন বলে জানালে তিনি বলেন, ‘তাদের পিতা-মাতার উপস্থিতিতে মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে।’

চুল কেটে দেওয়া সেলুনের মালিক স্বপন শীল জানান, ‘রেশাদ মেম্বার নিজে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। জিরো মেশিন নিয়ে গিয়ে পাঁচজনের চুল কেটে দিতে বলেন।’

রাঙ্গাবালী থানার ওসি শামীম হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। কেউ অভিযোগ দিলে ও প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ জানান, ‘ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মাহমুদ হাসান রায়হান/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।