যে কারিগরের সৃষ্টিতে রঙিন হয়েছে প্রতিদিনের জীবন
১৩ সংখ্যাটিকে অনেকেই অশুভ মনে করেন। কুসংস্কার বলে, এই সংখ্যা নাকি ছায়া ফেলে দিনপঞ্জির ওপর। এই দিনটিকে নাকি এড়িয়ে চলাই ভালো। অথচ ১৩ নভেম্বরই বাংলাদেশ পেয়েছিল তার এক মহামূল্যবান উপহার। এই দিনে জন্মেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি সেই গল্পকার, যিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের জীবনের প্রতিদিনের গল্পকে রঙিন ও প্রাণবন্ত করে রেখেছেন।
উপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক - এই তিন পরিচয়ের একত্রে হুমায়ূন আহমেদ বদলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি দর্শকের নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখার ধরন। তার সাহিত্য, নাটক ও সিনেমার সরলতা, আবেগের সততা, হাস্যরস এবং দৈনন্দিন জীবনের গভীর বোঝাপড়া দিয়ে গড়া। কোনো বাড়াবাড়ি নাটক নয়, কোনো ভণ্ডামি নয়। তার গল্প ছিল চারপাশের মানুষকে নিয়েই। আমাদের পরিবার, আমাদের যুদ্ধ, আমাদের নীরবতা, আমাদের টিনের চালের বৃষ্টি কিংবা ফাঁক গলে ঘরে এসে পড়া জোছনার হাসির গল্প।
আরও পড়ুন
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন
স্টার সিনেপ্লেক্সে একটি টিকিট কিনলে আরেকটি ফ্রি
তার সিনেমা ইতিহাসকে ধরে রেখেছে, আমাদের গ্রামীণ ও নাগরিক সংস্কৃতিকে উদযাপন করেছে। দেখিয়েছে জীবন ঠিক কেমন করে নিঃশব্দে, স্বাভাবিকভাবে, অথচ গভীর আবেগে বয়ে চলে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন তরুণ। তিনি বন্দুক হাতে যোদ্ধা হননি। কিন্তু স্মৃতিতে তিনি ইতিহাসকে রেখে গেছন চিরদিনের মতো জীবন্ত করে। যুদ্ধে বাবাকে হারিয়েছেন। পরিবার নিয়ে কষ্ট করেছেন। সেইসব অনুভূতিগুলো দলিল হিসেবে রয়েছে। ২৩ বছর বয়সে তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন যুদ্ধের নৃশংসতা। সেই অভিজ্ঞতা রূপ নেয় ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমায়। সেটি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল। আজও মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার আলাপ হলে ‘আগুনের পরশমণি’ থাকে সবার প্রিয় তালিকায়।
এছাড়াও তার ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিগুলোতেও মুক্তিযুদ্ধ এসেছে সর্গবে। আরও অনেক নাটকে, সাহিত্যেও।
যুদ্ধের গল্প পেরিয়ে হুমায়ূন লোককথা ও কল্পনার জগতেও অবিস্মরণীয় এক কারিগর। তিনি দেখিয়ে গেছেন গ্রামীণ জীবনের সৌন্দর্য, হাসি-ঠাট্টা, উঠোনের আসর, রাতের সংগীত- সবকিছু। তার সাহিত্য-গানে ও নানা সৃষ্টিতে প্রেম ধরা দিয়েছে অপার্থিব হয়ে। কখনো কখনো তা বেপরোয়াও।
তবে জীবনবোধের দারুণ আখ্যানও সেগুলো। বিশেষ করে তার ধারাবাহিক নাটকগুলো পারিবারিক বন্ধনে প্রেম, মায়া, দায়িত্ববোধকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। আছে অসাম্প্রদায়িকার বার্তাও। আর দিনশেষে বিনোদনের প্রয়োজনে হুমায়ূন আহমেদ এই মুুলুকে আজও শীর্ষে। স্বভাবতই তার নাটক-সিনেমার বিভিন্ন লিংকের মন্তব্যের বক্সে চোখ রাখলেই দেখা যায় তাকে মিস করার হাহাকার।
আজ হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন। তিনি চলে গেছেন ২০১৩ সালে। ক্যানসারে ভুগে মারা যান তিনি। তবে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা। রেখে গেছেন অমরত্ব। অন্তত হিমু, বাকের ভাই, নক্ষত্রের রাতের দুলাভাই কিংবা হাসান সাহেব আর মিসির আলীরা হুমায়ূনকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ।
এলআইএ/এএসএম