বিয়ের আগে ওজন কমাতে যা করবেন
শুরু হয়ে গেছে বিয়ের মৌসুম। একটি মেয়ের জীবনে বিয়ের দিনটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্তগুলোর একটি। তাই সেই দিনে নিজেকে সবচেয়ে সুন্দর, আত্মবিশ্বাসী ও উজ্জ্বল দেখাতে চায় সবাই। কিন্তু বিয়ের আগের দিনগুলো বেশ চাপের মধ্যেই কাটে বর-কনের। কেনাকাটা, অতিথি তালিকা, অনুষ্ঠান আয়োজন ও নানা পরিকল্পনার ভিড়ে নিজের যত্ন নেওয়ার সময় অনেকেরই হয়ে ওঠে না।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়ে চেহারায়-ক্লান্তি, নিস্তেজ ভাব বা অস্বস্তি সহজেই চোখে পড়ে। অথচ বিয়ের আগে যদি হাতে একটু সময় থাকে, তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন এনে নিজেকে ফিট, সতেজ ও সুন্দর করে তোলা সম্ভব।
বিয়ের অন্তত এক মাস আগে থেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে নজর দিন। ছোট ছোট পরিবর্তনই ধীরে ধীরে শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা বিয়ের দিন আপনার সৌন্দর্যে স্বাভাবিক আভা এনে দেবে।

বিয়ের আগে ওজন কমানোর জন্য ডায়েট প্ল্যান
বিবাহের আগে ওজন কমানো মানে শুধু দ্রুত রোগা হওয়া নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা। এই সময় খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, প্রচুর সবজি ও ফল রাখা খুবই জরুরি। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর থাকবে সুস্থ ও সতেজ।
১. নিয়মিত জুস পান করুন
প্রতিদিন গাজর, বিটরুট, টমেটো ও আমলকীর মতো সবজি এবং ফল দিয়ে তৈরি জুস পান করতে পারেন। এগুলো ডায়েট বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে। গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে ত্বককে সতেজ রাখে। আমলকী ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় থাকে। বিটরুট শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং ত্বক ও চুলকে প্রাণবন্ত রাখে।
২. চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিন
পুরো একমাস চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চললে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা কমে এবং ত্বকও পরিষ্কার থাকে। আলু, ভুট্টা বা মিষ্টি আলুর মতো স্টার্চযুক্ত সবজি কম খাওয়াই ভালো, কারণ এগুলো দ্রুত ওজন বাড়াতে পারে। দুধ চায়ের অভ্যাস থাকলে তা বদলে চিনি ছাড়া চা বা গ্রিন টি বেছে নিন, যা শরীরকে ডিটক্স করতেও সাহায্য করে।
৩. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান
রাতের খাবারে ভাত ও রুটির পরিবর্তে সবজি ও প্রোটিনজাত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম বা দুধ রাখলে হজম সহজ হয় এবং ফ্যাট জমার ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি বিয়ের আগে খাদ্যতালিকায় লাল চাল, গোটা শস্য ও পর্যাপ্ত সালাদ রাখলে পেট ভরা থাকে, হজম ভালো হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

৪. অতিরিক্ত চা বা কফি পানের অভ্যাস কমানো
অতিরিক্ত চা বা কফি পান করার অভ্যাস কমিয়ে আনাই ভালো, কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে পানিশূন্যতা ও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে ডুবো তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয় এবং ত্বকও থাকে সতেজ। কেনাকাটার জন্য সারাদিন বাইরে থাকতে হলে সঙ্গে কিছু ড্রাই ফ্রুটস রাখুন। এগুলো অপ্রয়োজনীয় জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
৫. ওমেগা-৩ রাখতে হবে
চিয়া সিডের পানি প্রতিদিন পান করার চেষ্টা করুন। এটি ওমেগা–৩-এর অন্যতম সেরা উৎস, যা শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ও শক্তি বাড়ায়। চিয়া সিডের পানির পাশাপাশি ফ্যাটি মাছ, আখরোট, তিসি বীজ নিয়মিত খেলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। ফলে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ এবং সতেজ থাকবে।
এছাড়া টক দই সুস্বাদু এবং অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। এটি খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সহায়ক, তাই প্রতিদিন টক দই খাওয়া উচিত।
৬. ঠিক মতো ঘুমানো
রাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে বিশ্রাম দেয়, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন সহায়ক, তেমনই ত্বককে রাখে উজ্জ্বল ও সতেজ।

৭. পর্যাপ্ত পানি পান করা
পর্যাপ্ত পানি পান করা সুস্থ শরীর ও সুন্দর ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি বা তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সহজে বের হয়ে যায় এবং ভেতর থেকে শরীর পরিষ্কার থাকে। একবারে বেশি পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে সারাদিন পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুললে তা হজমের জন্যও উপকারী হয়।
এই অভ্যাস অপ্রয়োজনীয় খিদে কমাতে সাহায্য করে, ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। পাশাপাশি চিনিযুক্ত পানীয়, সফট ড্রিংকস বা সোডা এড়িয়ে চললে শরীর থাকবে হালকা, সতেজ ও স্বাস্থ্যকর।
৮. শরীরচর্চা করা
প্রতিদিনের রুটিনে অবশ্যই অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চার জন্য সময় রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে ফিট রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপও কমায় এবং এনার্জি বাড়ায়। এর সঙ্গে মেডিটেশন অভ্যাস করলে মন শান্ত থাকে, দুশ্চিন্তা কমে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। বিয়ের আগের ব্যস্ত সময়ে শরীরচর্চা ও মেডিটেশন আপনাকে ভেতর থেকে সতেজ, আত্মবিশ্বাসী ও সুন্দর অনুভব করতে সাহায্য করবে।
সূত্র: উইমেন্স হেলথ, ম্যারেজ ডটকম, হিন্দুস্তান টাইমস
আরও পড়ুন:
২১ দিনের ড্রিংক চ্যালেঞ্জে নেহা ধুপিয়ার চমকপ্রদ পরিবর্তন
দুপুরে খাবারের পর চা পান করা কতটা স্বাস্থ্যকর
এসএকেওয়াই/