এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিতে ‘অনৈক্যের শঙ্কা’

আমানউল্লাহ আমান
আমানউল্লাহ আমান আমানউল্লাহ আমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৯

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টিতে এখন কী হবে- যদিও এর আগে কয়েক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি। ওই সময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এখন তিনি নেই। এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিতে ‘অনৈক্যের আশঙ্কা’ করছেন দলটির নেতারা। তাদের ভাষ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদ দলের মধ্যে ক্ষমতার একটি সুষম বণ্টন তৈরি করে দিয়ে গেছেন। তারপরও একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী অনৈক্য সৃষ্টি করা বা দল ভাঙার চেষ্টা করতে পারেন।

আরও পড়ুন >> এরশাদ বেঁচে থাকবেন ৬৮ হাজার গ্রামে

জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত বা তার কাছ থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত অনেক নেতাই অসন্তুষ্ট। ওই নেতারা চেয়েছিলেন, জাতীয় পার্টির পরবর্তী চেয়ারম্যানের বিষয়টি অমীমাংসিত থাকুক। এরশাদের অনুপস্থিতিতে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় অথবা কাউন্সিল করে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হোক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, স্যার আর নেই। তার অনুপস্থিতিতে পার্টিতে একটা ঝড় বয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তবে স্যার শেষ সময়ে এসে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। সেটা হলো, জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছেন। জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে আবারও রাজনীতির আলোচনায় আসতে পারেন তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা। জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিদিশার। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকাও পালন করছেন তিনি। এখন চেয়ারম্যান নেই, জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদিশার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা- এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আরও পড়ুন >> প্রেমিক এরশাদ, ব্যর্থ এরশাদ

জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, জি এম কাদেরকে ষড়যন্ত্র করে, স্যারকে (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) ভুল বুঝিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে এবং পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানো হয়েছিল। শেষ সময় স্যার বুঝতে পেরে জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছেন। তবে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদে পুনর্বহাল করতে পারেননি।

ওই দুই নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই নিজেদের পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। তারপরও অধিক সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য তারা এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টির কোনো কোনো সংসদ সদস্য এরশাদের মৃত্যুর পর দল ত্যাগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্য যে দলে গেলে অধিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে সেই দলেই যেতে পারেন। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে সেই প্রস্তুতি দেখা গেছে বলে দাবি জাতীয় পার্টির একাংশের।

আরও পড়ুন >> ঢাকায় এরশাদের ৩ জানাজা, দাফন সেনা কবরস্থানে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির দুই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, স্যার আর নেই। তার অনুপস্থিতিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে একটি অংশ জাতীয় পার্টিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৩/৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কয়েকজন সংসদ সদস্যকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। তাদের সবাই এবার চিনে ফেলেছেন। অধিকাংশ নেতাকর্মীই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তাদের ওই চেষ্টায় কোনো ভালো ফল পাওয়া যাবে না-মন্তব্য তাদের।

এইউএ/এমএআর/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।