‘পঞ্চপাণ্ডবের ওপর অতিনির্ভরতার কুফল মিলবে কয়েক বছরেই’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২১

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আহামরি নয়। দীর্ঘও না, ছোট। সাকুল্যে ৫ টেস্ট আর ৪১টি ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাকে ছোট করে দেখার কোনোই উপায় নেই।

তিনি কোন অখ্যাত ক্রিকেটারও নন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ধারেকাছে কেই নেই। প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটকে মানদণ্ড ধরলে তুষার ইমরান দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির আসরে যার অর্জন, কৃতিত্ব ও সাফল্য আকাশছোঁয়া। তিনি আসলে ‘রান মেশিন।’

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান (১৭৯ ম্যাচে রান ১১৯২২)। সর্বাধিক ৩২টি সেঞ্চুরি আর সবচেয়ে বেশি ৬৩টি হাফ সেঞ্চুরি- সবগুলো রেকর্ডই তুষার ইমরানের নামের পাশে লেকা।

সেই ১৯৯৯-২০০০ সালের দ্বিতীয় জাতীয় লিগ থেকে খেলা শুরু। এখনো খেলে যাচ্ছেন। নিয়মিত পারফর্মও করছেন। এবারও দুই ম্যাচে তুষারের ব্যাট থেকে রান এলো। প্রথম ম্যাচে ৯৯’তে রান আউট হওয়া তুষার পরের ম্যাচেই শতরান করেছেন।

তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, ভাল খেলার জন্য ইচ্ছে, আকাঙ্খা আর দৃঢ় সংকল্পটাই আসল। বয়স কোন বাঁধা নয়; কিন্তু হায়! বছরের পর বছর জাতীয় লিগে সবার সেরা নৈপূণ্য দেখিয়েও আর টেস্ট দলে ফেরা হয়নি যশোরের এ স্টাইলিস্ট মেধাবি উইলোবাজের।

টেস্ট দলে না ফিরতে পারলেও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন দেশের ক্রিকেটে। ক্লাব ক্রিকেট, বিসিএল আর এনসিএল খেলছেন নিয়মিতই। তাই দেশের ক্রিকেটের সত্যিকার অবস্থা কী? তা তুষারের খুব ভাল দেখা। ভাল জানা ও বোঝা।

Tushar-Imran.jpg

আসলে কোথায় আছে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট? মাঠ ও মাঠের বাইরের সত্যিকার চিত্র কী? কোথায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে? কোন খাতে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি । সবই খুব ভাল জানা তার। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের হাঁড়ির খবর যার জানা, সেই তুষার ইমরান নিজের দেখার আলোকে জাগোনিউজের সাথে একান্ত আলাপে সেগুলোই শেয়ার করেছেন।

জাগো নিউজ২৪.কম : বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন কোন পথে? আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে দেশের ক্রিকেট? টেস্ট মর্যাদা পাবার ২১ বছরে অগ্রগতি, উন্নতি কতটা, সেটা কী সন্তোষজনক?

তুষার ইমরান : নাহ উন্নতি তো অবশ্যই হয়েছে। আজ থেকে ১৪-১৫ বছর আগের সাথে তুলনা করলে অবশ্যই এগিয়েছে দেশের ক্রিকেট। আকাশ পাতাল না হলেও ওই সময়ের চেয়ে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই।

১৫ বছর আগে হয়তো আমরা ১০০টায় ১০টি ম্যাচ জিততাম, এখন ৫০টায় ৩০টা জিততে শিখেছি। কিন্তু আমি সন্দিহান, শঙ্কিত। আগামী কয়েক বছর পর আমাদের ক্রিকেটে উন্নতির গ্রাফটা থেমে যেতে পারে। নীচে নেমে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

জাগো নিউজ : কেন? কী কারণে এমন শঙ্কা এসে ভর করেছে আপনার মনে?

তুষার : কারণ আমরা অনেক বেশি ‘পঞ্চপান্ডব’ নির্ভর। তারা সবাই খেলা ছেড়ে দিলে বা ‘পঞ্চপান্ডব’ উপাখ্যান শেষ হবার পর কী হবে? তা নিয়ে আমি রীতিমত উদ্বিগ্ন। সেটাই কোয়েশ্চেন।

জাগো নিউজ : দেশের ক্রিকেট কী সঠিক পথে আছে?

তুষার : হ্যাঁ। টেস্ট ক্রিকেট বাদ দিলে আমার মনে হয় ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে সঠিক পথেই আছি। আপাততঃ রাইটওয়েতে আছি। পঞ্চ পান্ডবের একজন (মাশরাফি) চলে গেছে। বাকি চারজন খেলা ছাড়ার পর আমরা কী সঠিক পথে থাকতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে আমার। আগামী তিন বছর পরে আমাদের ক্রিকেট কোথায় যাবে? তা নিয়ে বিরাট সংশয় জেগেছে আমার মনে।

জাগো নিউজ : সে সংশয়টা একটু ভেঙ্গে বলবেন কী?

তুষার : পঞ্চপান্ডব অবসর নেয়ার পর দেশের ক্রিকেট মানে জাতীয় দলে বড় ধরনের সংকট ও শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাদের শূন্যস্থান পূরণের চিন্তাও করিনি আমরা। দলে যে আরও ক্রিকেটারের প্রয়োজন এবং তাদের জায়গা একদিন না একদিন খালি হবেই। সেই জায়গা পূরণের কাজটি যদি আগে থেকে হতো, তাহলে হয়ত এখনকার মত দুর্বলতা ও ঘাটতি দেখা দিত না। আমরা আসলে সময়ের কাজ সময়ে করিনি।

Tushar-Imran.jpg

জাগো নিউজ : গত কয়েক বছরের উন্নতি কী পঞ্চপান্ডব কেন্দ্রিক বা তাদের হাত ধরে পাওয়া নয়?

তুষার : নয়, তা বলবো না। অবশ্যই তাদের অনেক কৃতিত্ব, অর্জন আছে। তাদের হাত ধরে দেশ অনেক সাফল্য পেয়েছে। তবে আমার মনে হয় আমরাও এদের বাইরে যেতে পারিনি। আমরা ধরেই নিয়েছি আমাদের ক্রিকেটে ওই পাঁচ তারকাই সব। তারাই শেষ কথা। সব সাফল্য আর কৃতিত্ব আমরা তাদেরকেই দিয়ে দিয়েছি।

এর বাইরে যে আরও ক্রিকেটার ছিলেন, তারাও অবদান রেখেছেন। তাদেরও কমবেশি পারফরমেন্স ছিল। তারাও দল জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন; কিন্তু আমরা বোধ হয় তা ভুলেই গেছি। দলে যে ১১ জন থাকেন, খেলেন এবং স্কোয়াডে যে ১৪-১৫ কিংবা ১৬ জন ক্রিকেটারে গড়া হয়, তাদেরও যে অবদান আছে, তা আমাদের মাথায়ই ছিল না।

ধরেই নিয়েছি আর কেউ কিছু করেনি, কারো কোন অবদান নেই। সব সাফল্যই পঞ্চপান্ডবের। তেমন ভাবাও ছিল বড় ভুল। আসলে আমরা বাকিদের সেভাবে বিবেচনায় আনিনি। আরও ষষ্ঠ, সপ্তম কিংবা আরও কেউ যে উঠে আসতে পারতো- তাও হয়নি। উঠতে দেয়াও হয়নি। তারা আড়ালেই থেকে গেছেন। এতে করে পুরো দল পঞ্চপান্ডব নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন তারা অবসরে যাবার পর একটা বড়সড় শূন্যতা তৈরি হবে। সেটা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না।

জাগো নিউজ : এতে করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কী ক্ষতি হয়েছে? একটু ভেঙ্গে বলবেন কী?

তুষার : অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। আগামী তিন-চার বছর পর বোঝা যাবে প্রকৃত ক্ষতিটা কী হয়েছে? এখনতো পুরো দল তিন ফরম্যাটেই তাদের ওপর নির্ভরশীল। সবাই বলতেছে যে, এই ৪-৫ জন চলে গেলে কী হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে?

এদের ওপর আমরা এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে বলে শেষ করা যাবে না। হ্যাঁ মানছি, ‘পঞ্চপান্ডবে’র অবদান আছে বেশ। তারা ভাল খেলেছেন। বেশিরভাগ ম্যাচে তারাই দল জিতিয়েছেন; কিন্তু ওই ৫ জনের বাইরেও তো কেউ না কেউ পারফরম করেছেন। ওয়ানডেতে-টেস্টে অবদান রেখেছেন। বাকিরাও কিন্তু কিছু কিছু ম্যাচে অবদান রেখেছেন। ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্সও আছে কিছু। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য , সেগুলো হাইলাইটস হয়নি। পঞ্চপান্ডবই হাইলাইটস হয়েছেন বেশি। তাতে করে বাকিরা ঢাকা পড়ে গেছেন।

জাগো নিউজ : তাহলে কি দলে এরই মধ্যে শূন্যতা বা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে?

তুষার : এখন মনে হচ্ছে ঘাটতি তো রয়েই গেছে। অনেকগুলো কারণ আছে। যদি অনেকগুলো ধাপ ধরি তাহলে বেশ ঘাটতি আছে। ডমেস্টিক ক্রিকেট বলেন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই বলেন- বেশ কিছু ঘাটতির জায়গা কিন্তু রয়েই গেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়ানোর পাশাপাশি এখানে স্বচ্ছতা, ভাল আম্পায়ারিং আর স্পোর্টিং উইকেটে খেলা আয়োজনের কাজগুলো পুরোপুরি হয়নি। সেগুলো দরকার।

Tushar-Imran.jpg

জাগো নিউজ : আপনিতো দ্বিতীয় জাতীয় লিগ থেকে খেলছেন, জাতীয় লিগ কি দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে তেমন বড় ভূমিকা রাখতে পেরেছে?

তুষার : নাহ! একদমই কোন উন্নতি হয়নি বা কোনোই প্রভাব ফেলতে পারেনি - এটা ঠিক নয়। আগের জাতীয় লিগের সাথে এখনকার জাতীয় লিগের মানের পার্থক্য আছে। এক সময় জাতীয় লিগ হতো দায়সারা গোছের। অর্থ, সুযোগ-সুবিধা ছিল খুব কম। নাম মাত্র। তেমন ভাল উইকেটেও খেলা হয়নি। ক্রিকেটারদের মধ্যে ভাল খেলার তাগিদটাই ছিল কম।

এখন মোটামুটি সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। উইকেটেরও উন্নতি হয়েছে। খেলাতেও এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বীতা। আগে হয়ত অনেকেই গা লাগিয়ে খেলতো না। টাকা-পয়সা ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ছিল না তেমন। ঠিক ‘পিকনিক ক্রিকেট’ না, তবে এটা ঠিক যে, আগে আমরাই হয়ত খুব সিরিয়াস খেলতাম না। এখন সবাই সিরিয়াস। এখন ন্যাশনাল লিগ মোটামুটি ঠিক আছে।

তবে উইকেটের ব্যাপারে আমার কথা আছে, এক থেকে দেড় দিনে খেলা শেষ হয়ে যায়, এমন স্পিনিং ট্র্যাক বানিয়েও কিন্তু লাভ হবে না। আমাদের আসলে দরকার স্পোর্টিং উইকেটে খেলা।

জাগো নিউজ : টেস্ট ক্রিকেটে এগুনো সম্ভব হয়নি কেন?

তুষার : ঘরের মাঠে আমরা হয়ত কিছু সাফল্য পেয়েছি। কঠিন প্রতিপক্ষর সাথে কয়েকটি ভাল জয় আছে ঠিক; কিন্তু খুব খেয়াল করে দেখবেন, তার বেশিরভাগই ‘ওয়ান ম্যান শো’ বা হাতে গোনা কয়েক জনের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করে পাওয়া; কিন্তু টিম পারফরমেন্স সেভাবে আগায়নি।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের টেস্টে শুরুর দিকে বুলবুল ভাই, দুর্জয় ভাই, আকরাম ভাই, সুমন ভাই ও রফিক ভাইয়ের মত ক্রিকেটার আমরা তৈরি করতে পারিনি। বিশেষ করে তাদের ধৈর্য্য ও লড়াকু মানসিকতা ছিল। আত্মনিবেদনটাও ছিল বেশ। ওই মেন্টালিটির ক্রিকেটার আমরা খুব বেশী তৈরি করতে পারিনি।

জাগো নিউজ : সেই বুলবুল, সুমনদের মানসিকতা ও আত্মনিবেদনটা এখন নেই কেন? এর পেছনে দায়ী কারা? বোর্ড না ক্রিকেটাররা?

তুষার : এর বড় দায় অবশ্যই ক্রিকেটারদের। তবে আমার মনে হয় বোর্ডের দায়ও কম না। এখানে আসলে একটু দুরদর্শিতারও কমতি ছিল। আমরা সেই শুরু থেকে ওয়ানডের দিকে বেশি আকৃষ্ঠ হয়ে যাই। আমাদের চিন্তা, ভাবনা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা সবই প্রায় ওয়ানডে কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। সেটাও টেস্টে পিছিয়ে থাকার একটা বড় কারণ।

নতুন প্রজন্ম যে টেস্টে আকৃষ্ট হবে, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলতে উৎসাহী হবে- সেই কাজটিই হয়েছে কম। প্রায় সমস্ত অর্থ লগ্নি হয়েছে ওয়ানডেতে। সবাই জেনে গেছে, ওয়ানডে খেলতে পারলেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। টেস্টে বা দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে তা নেই। তাই পরের প্রজন্ম দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহী হয়েছে কম।

Tushar-Imran.jpg

আর এখন টি-টোয়েন্টি খেলতে পারলে, একটা গড়পড়তা পারফরমারও বিপিএল খেলে ২০-২৫ লাখ টাকা পায়। তাই সে আর দীর্ঘ পরিসরের খেলার দিকে ঝুঁকছে কম। সে জানে আমি অল্প কষ্ট করে একটু আধটু পারফরম করতে পারলেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ২০-২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবো। সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার কিছুই মিলে না। এজন্য তারা খেলতেও চায় না। তখনকার দিনে এভাবে অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ ছিল না। তাই সবাই সিরিয়াস থাকতেন। প্লেয়ারদের ভিতর একটা কিছু করার তাগিদ ও তাড়া ছিল। এখনকার ক্রিকেটাররা একটু বেশি অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

জাগো নিউজ : তবে কী নতুন প্রজন্মকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উৎসাহী করার কাজটি ঠিকমত হয়নি?

তুষার : আমার তো মনে হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উৎসাহী করে তোলার বদলে উল্টো অ্যাভয়েড করা হয়েছে। ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে দুটি আসর ঠিকই করা হয়েছে। তবে তার আদৌ কোন মূল্য আছে কিনা সন্দেহ।

ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটের পারফরমেন্সকে জাতীয় দলে খেলার, ঢোকার মানদন্ড হিসেবে ধরা হয় না। বছরের পর বছর ফাস্ট ক্লাস লিগে পারফরম করেও তাকে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া হয় না। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো কেউ জাতীয় লিগে ভাল খেললে যদিও বা তাকে নেয়া হয়, তাও টেস্টে নয়। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে। তাতে করে ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ভাল করা পারফরমারটি নিজেকে মেলে ধরার সত্যিকার বা অনকুল ক্ষেত্র পায় না।

জগা-খিচুড়ির মত পাকিয়ে গেছে সব। চিন্তা করেন, আজ থেকে তিন চার বছর আগে যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রকৃত পারফরমার, তারাও এভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। মূল্যায়িত হননি। এভাবে তারা হারিয়েও গেছেন।

জাগো নিউজ : আপনার কী মনে হয় একটু বয়স হয়ে গেলেই তার ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা কম আগ্রহ দেখান?

তুষার : হ্যাঁ। অথচ দেখেন পাশ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানে ইউনুস খান আর মিসবাহ-উল হক ৩৫ থেকে প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন। পারফরমও করেছেন সেরকম। কিন্তু আমাদের দেশে তিরিশে পা দিলেই ভাবা হয় সময় শেষ।

আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে থাকি বেশি। আমরা মনে হয় একটা বড় ভুলের পিছনে ছুটি। তাহলো আমরা ভাবি যে টেস্ট হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের খেলা। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। আমাদের মাথায়ই নেই যে, টেস্ট হচ্ছে পরিণত ও অভিজ্ঞদের আসর। টেস্ট ক্রিকেট ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করে না। টেস্ট খেলতে খেলতে শিখতে হয়।

জাগো নিউজ : জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলায় আগ্রহ কম কেন?

তুষার : খুব স্বাভাবিক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাকা কম। আমি ৫ গুণ বেশি টাকা পাই ওয়ানডে খেলে। আমার প্রস্তাব হলো, যারা ওয়ানডে খেলে ৪ লাখ টাকা করে পাচ্ছেন, তারা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে রাজি হবেন না। তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে উৎসাহি করতে হলে অবশ্যই ম্যাচ ফি আরও বাড়াতে হবে। তবেই সবাই উৎসাহী হবে দেশের দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলতে।

শেষ কথা হলো যখন জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটাররা জানবেন, দেখবেন ও বুঝবেন যে- ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ভাল করার বড় পুরস্কার হলো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া, তখন দেখবেন সবার মাঝেই উৎসাহ দ্বিগুণ হবে। কিন্তু তা কি হয়? ফাস্ট ক্লাসে ভাল করেও কি জাতীয় দলে ডাক পাওয়া যায়? সে নিশ্চয়তা কী আছে?

জাগো নিউজ : টি-টোয়েন্টিতে সামনে এগুতে না পারার কারণ কী?

তুষার : আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চিন্তা করলে আমরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আগাইনি। ১৭ বছর আগে আমরা যেভাবে, যে ছক ও কৌশলে টি-টোয়েন্টি খেলতাম, এখনো সেখানেই পড়ে আছি। অন্যরা অনেক ওপরে নিয়ে গেছে। আমরা আসলে ওয়ানডের জন্য পারফেক্ট। নট ফর টি-টোয়েন্টি।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।