শেকৃবি ছাত্রী মারিয়ার ‘মৃত্যু’

পাঁচ ঘণ্টায়ও উপাচার্যের দেখা পাননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৩

আবাসিক হল থেকে লাফিয়ে পড়ে শিক্ষার্থী মারিয়া রহমানের মৃত্যুতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং ক্লাস-পরীক্ষার চাপ কমানোসহ সাত দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘ সময় আন্দোলন করেও উপাচার্যের সাক্ষাৎ বা তার পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মারিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় রোববার (২ এপ্রিল) উপাচার্য ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বরাবর সাত দফাসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল। আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্য দপ্তরে স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসলেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এ বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন>> মারিয়ার মৃত্যুতে উত্তাল শেকৃবি, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ দাবি

এদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দোলন চললেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেননি উপাচার্য শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, মারিয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিবেদন এবং শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তনের আনুমানিক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হয়ে আশ্বাস দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এসম তারা প্রশাসনকে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা রোজা রেখে সকাল থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। ভিসি স্যার আমাদের দাবির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিলেন সেটি অল্প সময়ের জন্য এসে জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি একবারের জন্যও আমাদের সামনে আসেননি। তিনি না আসা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

পাঁচ ঘণ্টায়ও উপাচার্যের দেখা পাননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, প্রশাসন মারিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম সংক্রান্ত দাবিগুলো বিবেচনায় কমিটি গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এসব কমিটি কবে নাগাদ আমাদের দাবি বিবেচনায় আনতে পারবে সে ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি।’

আরও পড়ুন>> দায়ীদের চিহ্নিত ও ক্লাস-পরীক্ষার চাপ কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ

উপাচার্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে না আসার বিষয়ে বিশ্ববিধ্যালয়ের ছাত্রপরামর্শক প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রশাসনিক কাঠামো আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজে একটা প্র্যাক্টিস হয়ে গেছে, ছোট-বড় সবকিছু সরাসরি ভিসি পর্যন্ত যেতে হয়। প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী এসব বিষয় দেখা উচিত। উপাচার্যের আসন অনেক সম্মানের। আমরা এ আসনটা সম্মানের সঙ্গেই দেখি।’

পাঁচ ঘণ্টায়ও উপাচার্যের দেখা পাননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

এদিকে উপাচার্যের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আন্দোলনকারীদের চলে যেতে বললেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। আন্দোলনের গতি কমিয়ে দিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন>> শেকৃবিতে হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যাচেষ্টা ছাত্রীর

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় আলাদা কমিটি গঠন করবো। মারিয়ার মৃত্যু নিয়ে এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একাডেমিক মিটিং এবং তার পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনা করবো। তবে এটি অনেক লম্বা প্রক্রিয়া হওয়ায় এখনই কোনো নির্দিষ্ট বা আনুমানিক তারিখ জানাতে পারছি না।’

গত ২৪ মার্চ মারিয়া রহমান আবাসিক হলের ১০তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। গত ৩০ মার্চ সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর থেকেই আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

তাসনিম আহমেদ তানিম/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।