শুটিং করেও কেন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটক ছেড়ে দিয়েছিলেন সেলিম

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলা নাটকের ইতিহাসে কালজয়ী হয়ে আছে ‘কোথাও কেউ নেই’। এই নাটকে অভিনয় করে বাকের ভাইয়ের চরিত্রে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া অন্য চরিত্রগুলোও দারুণ সাড়া ফেলেছিল। নাটকটিতে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। কিন্তু কয়েক পর্বের শুটিং করেও তিনি নাটকটি ছেড়ে দেন।

কি সেই কারণ? দীর্ঘদিন পর অজানা সেই গল্প জানালেন অভিনেতা সেলিম। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল মঞ্চে। পরবর্তীতে টেলিভিশন নাটকে পা রাখার সময় শহীদুজ্জামান সেলিম ছিলেন অনেক বেশি সচেতন ও প্রস্তুত। কারণ তার আগে দুটো সিনেমায় যুক্ত হলেও পরিচিত মুখ না হওয়ায় বাদ পড়তে হয়েছিল তাকে। তাই দৃঢ় সংকল্প নিয়েই তিনি টেলিভিশন নাটকে জনপ্রিয়তা অর্জনের পথে নামেন।

১৯৮৯ সালে ‘জোনাকি জ্বলে’ নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে সেলিমের। শুরুতে মাত্র দু’টি দৃশ্য থাকলেও নাটকের শেষের দিকে গিয়ে তাঁর চরিত্রটি হয়ে ওঠে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

প্রবীণ অভিনেতা আবুল খায়ের তাকে খুবই পছন্দ করতেন এবং বিভিন্ন নির্মাতার কাছে তার হয়ে সুপারিশ করতেন। এমনকি হুমায়ূন আহমেদের ‘অয়োময়’ নাটকের জন্যও সেলিমের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তিনি। তবে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে শহীদুজ্জামান সেলিমের প্রথম সাক্ষাৎ মোটেও সুখকর ছিল না।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেলিম স্মরণ করেন, ‘খায়ের ভাই আমাকে হুমায়ূন আহমেদের একটি ফোন নম্বর দেন। বললেন, ‘তুই ফোন করবি, আমি বলে দিয়েছি।’ আমি ফোন করলাম। উনি জানতে চাইলেন, আমি কী কী কাজ করেছি। কিছু নাটক ও মঞ্চনাটকের কথা বললাম। উনি বললেন, ‘আমি তো আপনার কোনো নাটক দেখিনি। আপনি কি আপনার অভিনয়ের কোনো ভিডিও ক্যাসেট দিতে পারবেন?’

এই কথায় ক্ষুব্ধ হন সেলিম। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, ‘আমি অভিনয়ের ভিডিও ক্যাসেট করে পাঠাব এটা আপনি ভাবলেন কী করে! আপনি যদি আমার অভিনয় দেখতে চান, মহিলা সমিতিতে আসুন, ঢাকা থিয়েটারের নাটক দেখুন। তারপর বিচার করুন।’

এই ঘটনার পর ‘অয়োময়’-এ আর কাজ করা হয়নি তার। তবে কয়েক বছর পর হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে সুযোগ পান সেলিম। অভিনয় করছিলেন এক চিকিৎসকের চরিত্রে। কিন্তু নাটকের শুটিং শুরু হওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন, এই চরিত্রে তাঁর জন্য যথেষ্ট পরিসর নেই।

সেলিম বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন বলে কম দৃশ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক-দুই মাস পেরিয়ে গেলেও আমার চরিত্র বাড়ে না। প্রতিটি পর্বে মাত্র ২-৩টি দৃশ্য। অথচ সে সময় বিটিভির নিয়ম ছিল একটি নাটকে যুক্ত থাকলে অন্য নাটকে কাজ করা যেত না। ফলে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম।’

সহশিল্পীদের অনুরোধে কিছুদিন অপেক্ষা করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সাহস করে সিদ্ধান্ত নেন সরে যাওয়ার।

সেলিম বলেন, ‘আমি হুমায়ূন ভাইকে গিয়ে বললাম, ‘আপনি আমাকে রিলিজ করে দিন।’ উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। ইউনিটের সবাইও হতবাক। হুমায়ূন আহমেদের নাটক কেউ ছেড়ে দেয়! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘আপনি তো আমাকে ব্যবহার করছেন না। অন্য নাটক থেকে ভালো প্রস্তাব আসছে, আমি কাজ করতে চাই।’ তখন উনি বললেন, ‘আরো একটা পর্ব দিন, এরপর ছেড়ে দেব।’

সেই পর্ব শেষ হওয়ার পর, শহীদুজ্জামান সেলিমকে আর হুমায়ূন আহমেদের কোনো নাটকে দেখা যায়নি। তিনি জানান, ওই সময় তার এই সাহসী সিদ্ধান্তে অনুপ্রেরণা ছিলেন আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি।

সেলিম বলেন, ‘ফরীদি ভাই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হয়, এবং কীভাবে তা ধরে রাখতে হয়। তার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম নিজের কাজ ও সম্মান নিয়ে আপস না করার সাহস।’

এলআইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।