পদদলনে মামলা হলেও নাম নেই বিজয়ের, কী হচ্ছে তামিলনাড়ুতে?
দলের সমাবেশে পদদলনে মামলা হলেও নাম নেই বিজয়ের। কিন্তু কেন, কী হচ্ছে তামিলনাড়ুতে? করুরে গত শনিবারের ওই মর্মান্তিক ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এ ঘটনায় এরই মধ্যে একটি মামলা করেছে প্রশাসন। তবে তাতে আসামি করা হয়েছে কেবল তামিলাগা ভেত্রি কাজাগামের (টিভিক)-এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের। এফআইআরে নাম দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিজয়ের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ডিএমকে সরকারের একটি হিসাবি পদক্ষেপ। কারণ, বিজয়ের মতো জনপ্রিয় তারকার বিরুদ্ধে হঠাৎ ব্যবস্থা নিলে তা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং উল্টো সমর্থন তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন>>
বিজয়ের বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি, চেন্নাইয়ে উচ্চ সতর্কতা
২৪ ঘণ্টা পেরোলেও দেখা নেই বিজয়ের, কোথায় আছেন থালাপতি?
থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে কীভাবে ঘটলো ভয়াবহ পদদলন?
বিজয়ের সমাবেশে পদদলনের নেপথ্যে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র’?
তদন্ত কমিশন ও আদালতের ভূমিকা
করুচে পদদলনের ঘটনায় তামিলনাড়ু সরকার হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অরুণা জগদীশনকে প্রধান করে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পাশাপাশি, মাদ্রাজ হাইকোর্টও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা নিতে পারে। ফলে সরকার চাইছে, প্রথম পদক্ষেপ কমিশন বা আদালতের দিক থেকেই আসুক।
অন্যদিকে সিবিআই তদন্তের দাবিও উঠেছে, যেখানে কিছু আবেদনকারীর সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার রাতেই করুর থানায় টিভিকের জেলা সম্পাদক ভি পি মাথিয়াঝাগানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ‘বাসি’ আনন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটিআর নিরমল কুমারের নামও যুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অবহেলা, জনজীবন বিপন্ন করা, সরকারি নির্দেশ অমান্যসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে লক্ষণীয়ভাবে, মামলায় নাম আসেনি বিজয় ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আধব অর্জুনার।
সতর্ক ডিএমকে
মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানালেও বিজয়ের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি স্পষ্ট করেছেন, তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের পরই পরবর্তী পদক্ষেপ হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিনও একই সুরে বলেছেন, ‘প্রচার সবার অধিকার, তবে ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আয়োজকদের।’
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জয়ললিতার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন না স্ট্যালিন। আদালত বা কমিশনের দিক থেকে চাপ এলে তবেই ব্যবস্থা নেবেন।
টিভিকের দুর্বল প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর থেকে করুরে টিভিকের কার্যালয় বন্ধ। এখন পর্যন্ত দলটির কোনো নেতা হাসপাতালে যাননি, তাদের ফোনেও পাওয়া যায়নি।
রোববার এক বিবৃতিতে বিজয় এ দুর্ঘটনাকে ‘অপরিমেয় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেন এবং নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ ও আহতদের ২ লাখ রুপি সহায়তার ঘোষণা দেন।
তবে সমাবেশ শেষে তার করুর ছেড়ে চলে আসা এবং পরে চেন্নাইয়ে ফিরে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। বিজয় সংবাদমাধ্যমের সামনেও আসেননি। তার চেন্নাইয়ের বাসভবনে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড়
রাজ্যের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো টিভিকের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন ডিএমকেরও সমালোচনা করেছে। ভিসিকে নেতা থোল তিরুমাভালাভান বলেন, মানুষ রাজনৈতিক নেতাকে নয়, সিনেমার নায়ককে দেখতে গিয়েছিল—এটাই বেদনাদায়ক।
অভিনেতা-রাজনীতিক কমল হাসান শনিবারের ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে আখ্যা দেন। কংগ্রেস নেতা কে সেলভাপেরুনথাগাই বলেন, জনসমাবেশ আয়োজনের ক্ষেত্রে এটি শিক্ষণীয় ঘটনা। বিজেপি রাজ্য সভাপতি নাইনার নাগেন্দ্রন সরকারকে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন।
সামনে কী?
জগদীশন কমিশন এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতেও একাধিক মামলা চলছে। তাই বিজয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ডিএমকের অবস্থান অনেকটাই নির্ভর করবে বিচারিক ও তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
কেএএ/