যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ বাণিজ্য চুক্তিতে লাভ হলো কার?
কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাণিজ্য চুক্তিতে সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি আসন্ন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী বেশিরভাগ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে এবং ইউরোপীয় রপ্তানিকারকদের লাভ কমবে।
ট্রাম্পের স্কটল্যান্ড সফরের সময় এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা যানবাহন, সেমিকন্ডাক্টর, ওষুধসহ অধিকাংশ পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। এটি পূর্বে ঘোষিত ৩০ শতাংশের তুলনায় কম হলেও বর্তমান স্বাভাবিক শুল্কহার ১ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।
নতুন শুল্কে বাড়বে ব্যয়
চুক্তি অনুযায়ী, ‘কৌশলগত’ কিছু পণ্যের ওপর থেকে সম্পূর্ণভাবে শুল্ক তুলে নেওয়া হবে, যার মধ্যে রয়েছে বিমানযন্ত্রাংশ, নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, কিছু কৃষিপণ্য ও কাঁচামাল। তবে এসব পণ্যের নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন>>
- যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ, ছাড় পেতে আশাবাদী বাংলাদেশ
- ১ আগস্টের সময়সীমা আর বদলাবে না, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের সতর্কবার্তা
- ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি: এশিয়ার দেশগুলোই কেন প্রধান টার্গেট?
চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস, তেল ও পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি করবে, যাতে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ৬০০ বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও এর অর্থায়নের সূত্র এখনো স্পষ্ট নয়।
চুক্তি সত্ত্বেও আমদানি করা ইস্পাতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। যদিও ভবিষ্যতে তা কমাতে আলোচনা চলবে বলে জানানো হয়। ওষুধ খাত এখনো আলোচনার বাইরে রয়ে গেছে এবং কিছু কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক কমানো সম্ভব হয়নি।
ব্যবসায়িক চাপ ও ব্যয়বৃদ্ধি
আগের ৩০ শতাংশের হুমকির তুলনায় ১৫ শতাংশ শুল্ক তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক হলেও এটি বিদ্যমান সাধারণ শুল্ক হারের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে ব্যবসাগুলোকে অতিরিক্ত খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে হতে পারে অথবা তাদের মুনাফা কমে যেতে পারে।
নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হলে ইউরোপীয় রপ্তানিকারকদের লাভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে ইইউ এরই মধ্যে ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০ দশমিক ৯ শতাংশ করেছে।
ইউরোপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ চুক্তিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করলেও আরও বেশি শুল্ক ছাড় প্রত্যাশা করেছিলেন। জার্মান শিল্প ফেডারেশন ১৫ শতাংশ শুল্ককে রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
আইএনজি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ কার্সটেন ব্রজেস্কি বলেন, লিখিত চুক্তির অনুপস্থিতি বড় একটি দুর্বলতা হলেও এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক বড় ঝুঁকি হ্রাস করেছে।
সূত্র: এপি, ইউএনবি
কেএএ/