ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কে বিপাকে ভারত: কোন পথে যাবে নয়াদিল্লি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০২৫
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী/ ফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যে দুই দফায় মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ২৫ শতাংশ শুল্ক বুধবার (৭ আগস্ট) থেকেই কার্যকর হয়েছে, বাকি ২৫ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে। এই উচ্চ শুল্ক ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আলোচনায় অগ্রগতি না হলে এই শুল্ক বাড়তি চাপ তৈরি করবে ভারতের রপ্তানি ও কূটনৈতিক কৌশলে।

এখন প্রশ্ন—এই সংকট মোকাবিলায় নয়াদিল্লির সামনে উপায় কী?

আলোচনার টেবিলে ফেরা

ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এর আগে পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনা হয়েছে। তবে কৃষি, দুধ এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে আলোচনা ভেস্তে যায়।

তবু ভারতীয় কর্মকর্তারা এখনো আশাবাদী, ‘ঘরোয়া আলোচনার’ মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল চলতি মাসেই নয়াদিল্লি সফর করবে, যা একটি কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।

আরও পড়ুন>>

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, তিনি কৃষক, মৎস্যজীবী এবং গবাদিপশু পালনকারীদের স্বার্থে ‘ব্যক্তিগত মূল্য দিতে প্রস্তুত’।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানো

ভারতের আমদানি করা মোট তেলের এক-তৃতীয়াংশ এখন আসে রাশিয়া থেকে। ২০২২ সালের আগে এটি ছিল মাত্র ০.২ শতাংশ। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ তেল সস্তা হওয়ায় ভারত এই সুযোগ নেয়।

যদিও নয়াদিল্লি এর আগে বলেছে, বিকল্প উৎস থেকেও তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব—যেমন সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও এমনকি যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়া ভারতীয় কৌশলগত স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায়।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরই ভারত সফরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে মস্কো সফরে গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, শিগগির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও যাবেন বলে জানা গেছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট গড়া

ট্রাম্পের শুল্ক-যুদ্ধে ভারত একা নয়। ব্রাজিলও একই ধরনের চাপের মুখে। উভয় দেশই ব্রিকস জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা জানিয়েছেন, এই শুল্ক ইস্যুতে যৌথ পদক্ষেপের জন্য তিনি ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

ভারতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে, একইসঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়ন, ব্রিকস ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়াও জরুরি।

আলোচনা ব্যর্থ হলে কী হবে?

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট জিডিপির দুই শতাংশের মতো।

ভারতের প্রধান রপ্তানিপণ্যের মধ্যে রয়েছে গার্মেন্টস ও তৈরি পোশাক, ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস, হীরা-রত্ন ও গহনা, পেট্রোকেমিক্যালস প্রভৃতি। নতুন শুল্ক কার্যকর হলে ওষুধ ছাড়া অন্য প্রায় সব রপ্তানিই ব্যাহত হতে পারে।

শুধু পণ্য বাণিজ্য নয়, প্রযুক্তি কর্মীদের ভিসা, সফটওয়্যার ও সার্ভিস আউটসোর্সিং খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রোগ্রাম ও আউটসোর্সিংয়ের সুবিধাভোগী ভারতীয়রা এই সংকটে পড়বেন—যা স্থানীয় রাজনীতিতেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।