‘ভারতে বানিয়ে ভারতেই কিনুন’

ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলায় মোদীর তত্ত্ব কতটা কার্যকর?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২৫
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী/ ফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে গতকাল বুধবার (২৭ আগস্ট)। এখন থেকে ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে হলে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে। ফলে ভারতের রপ্তানি খাত ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিষেধ সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কশাস্তি। তবে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এই চোখ রাঙানির বিপরীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ভারতে বানান, ভারত থেকেই কিনুন’। অর্থাৎ মার্কিন শুল্ক মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরেই পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রি করে রপ্তানিনির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজ দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশাল কর ছাড়ের ঘোষণা দেন মোদী।

আরও পড়ুন>>

দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় দিল্লির লালকেল্লা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকদের সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সে সময় ছোট দোকান মালিক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দোকানের বাইরে ‘স্বদেশি’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বোর্ড লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

মোদী বলেছিলেন, হতাশা থেকে নয়, বরং গর্ব থেকে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের অসুবিধাগুলো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, অবশ্যই সামনে এগোতে হবে। কেউ যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।

এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

মোদীর এই অবস্থানকে অনেকেই ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখছেন। মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষের জীবিকা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ মার্কিন গ্রাহকদের পোশাক থেকে শুরু করে হীরা, চিংড়ির মতো বহু পণ্য সরবরাহ করে ভারত।

ভারতে বানিয়ে ভারতে বিক্রি কতটা কাজে দেবে?

মোদী নির্দেশ দিলেও এ বিষয়ের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। যদি উৎপাদনের কথা আলোচনা করা হয়, সেক্ষেত্রে ভারতের ব্যর্থতার ছাপ এরই মধ্যে স্পষ্ট। কারণ ভারতে বছরের পর বছর সরকারি ভর্তুকি এবং উৎপাদন প্রণোদনা চালুর পরও দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৫ শতাংশের আশপাশেই স্থবির হয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদি কর সংস্কারকে উৎসাহিত করে এবং অবিলম্বে জনগণের হাতে আরও বেশি অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে এ ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সহায়ক হতে পারে।

এ কারণে চলতি বছরের শুরুতে বাজেটে ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড়ের ঘোষণার পর এখন পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) কমানো এবং সরলীকরণের মাধ্যমে ভারতের পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করছে মোদী সরকার।

মূলত কর ছাড়ের ফলে ভোক্তানির্ভর খাতগুলোর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুটার, ছোট গাড়ি, পোশাক এবং সিমেন্টের মতো পণ্য।

সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বেশিরভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, কম জিএসটির কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে, তা বাড়তি শুল্ক আদায় এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজেটের তুলনায় বেশি লভ্যাংশের মাধ্যমে পূরণ হবে।

অন্যদিকে, বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গান স্ট্যানলির মতে, মোদীর এ রাজস্ব প্রণোদনা বা কর ছাড় ভোগব্যয়ের পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এতে দেশটির জিডিপি বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমবে।

সুইস বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস বলেছে, জিএসটি কমানোর এ সিদ্ধান্ত মোদীর আগের নেওয়া করপোরেট ও আয়কর কমানোর তুলনায় বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ এগুলো ক্রয়ের সময় সরাসরি ভোগব্যয়কে প্রভাবিত করবে।

সূত্র: এপি, ইউএনবি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।