বাসা পরিবর্তনের পর নতুন পরিবেশে মন না বসলে করণীয়

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত

মাসের শুরু মানেই ঢাকার অলিগলি, গলিপথে নতুন ভাড়াটিয়াদের যাতায়াত চোখে পড়ে। অনেকেই নতুন চাকরি, উচ্চশিক্ষা কিংবা পারিবারিক কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যান। বিশেষ করে রাজধানীতে যারা থাকেন, তাদের বড় অংশই ঢাকার স্থানীয় নন। ফলে বারবার বাসা বদলের অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাসা বদল মানে শুধু নতুন ঘর নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্মৃতি, সম্পর্ক আর মানসিক এক ধরনের চাপ।

একটি বাসায় যদি দীর্ঘদিন থাকা হয়, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের মায়া জন্মে। আশপাশের প্রতিবেশী, দোকানদার, রাস্তার পরিচিত মুখ সব মিলে সেটি হয়ে ওঠে এক টুকরো আপন ভুবন। হঠাৎ করে সেই জায়গা ছাড়তে হলে অনেকের ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়। বিশেষ করে যারা ইন্ট্রোভার্ট, তাদের কাছে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

বাসা বদলের পর নতুন জায়গায় এসে মন না বসার পেছনে কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ কাজ করে। যেমন-

১. অভ্যাসের ভাঙন
মানুষ স্বভাবত অভ্যস্ত প্রাণী। যে রাস্তায় প্রতিদিন হাঁটা, যে দোকান থেকে নিয়মিত বাজার করা এসব ভাঙলে মনে অস্থিরতা আসে।

২. সামাজিক বন্ধন
আগের জায়গার প্রতিবেশীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক হঠাৎ ভেঙে গেলে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়।

৩. অপরিচিত পরিবেশের চাপ
নতুন বাসায় আসার পর আশেপাশের মানুষের চরিত্র, এলাকার নিরাপত্তা কিংবা সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে না জানার কারণে মন খারাপ হতে পারে।

৪. ব্যস্ততার অভাব
প্রথমদিকে পরিচিত মানুষজন না থাকায় একাকীত্ব বাড়ে। এই ফাঁকা সময়ে মন ঘুরে ঘুরে আগের বাসার স্মৃতির দিকেই চলে যায়।

তাহলে করণীয় কী হতে পারে? নতুন বাসায় এসে যদি মন না বসে, তবে ধীরে ধীরে কিছু পদক্ষেপ নিলে সহজে মানিয়ে নেওয়া যায়-

১. নিজের মতো ঘর সাজিয়ে নিন
নতুন বাসায় উঠে প্রথম কাজ হওয়া উচিত নিজের ঘরটিকে আপন করে তোলা। পর্দা, বিছানার চাদর, গাছপালা কিংবা ছোটখাটো শোপিস যা আপনাকে স্বস্তি দেয়, তা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন। পরিচিত জিনিসপত্র চোখে পড়লে নতুন জায়গাতেও এক ধরনের পরিচিতি খুঁজে পাওয়া যায়।

বাসা পরিবর্তনের পর নতুন পরিবেশে মন না বসলে করণীয়

২. রুটিন তৈরি করুন
বাসা বদলের পর হঠাৎ সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তাই দ্রুত একটি রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন কোথায় বাজার করবেন, কীভাবে অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, কখন ঘুমোবেন এসব ঠিক করে নিলে মানসিক স্থিরতা ফিরে আসে।

৩. প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচিত হোন
প্রথম কয়েকদিনেই চেষ্টা করুন পাশের ফ্ল্যাট বা বাড়ির মানুষের সঙ্গে আলাপ করতে। সাধারণ একটা হাসি, প্রয়োজনীয় তথ্য জিজ্ঞেস করা কিংবা এক কাপ চা শেয়ার করার মধ্য দিয়েই সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ছোট্ট সম্পর্কও একাকীত্ব কমিয়ে দেয়।

৪. আশেপাশের এলাকা চিনে নিন
নতুন বাসার কাছাকাছি কোথায় বাজার, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, লাইব্রেরি বা পার্ক আছে তা খুঁজে বের করুন। মাঝে মাঝে হেঁটে আশেপাশে ঘোরাফেরা করুন। এতে এলাকা পরিচিত হয়ে উঠবে এবং নিরাপত্তাবোধ বাড়বে।

৫. সামাজিক সংযোগ বজায় রাখুন
নতুন জায়গায় আসার পর আগের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলবেন না। ফোন, সামাজিক মাধ্যম কিংবা সপ্তাহে একবার দেখা করা মানসিক চাপ কমায়। পাশাপাশি অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

৬. ছোট ছোট আনন্দ তৈরি করুন
নতুন বাসায় মানসিক চাপ এড়াতে ছোট ছোট আনন্দ খুঁজে নিন। যেমন: ছাদে বসে বই পড়া, আশেপাশের পার্কে হাঁটা, নতুন কোনো খাবার দোকান ট্রাই করা। এভাবে পরিবেশের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

৭. ধৈর্য ধরুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য। নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অন্তত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। তাই শুরুতেই হতাশ না হয়ে নিজেকে সময় দিন। মনে রাখুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু সহজ হয়ে যায়।

ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এই সময়টি চ্যালেঞ্জিং। তারা সহজে মিশতে পারেন না বলে একাকীত্বের শিকার হন। এই পরিস্থিতিতে ছোট পরিসরে হলেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন। সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয় কোনো গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। ঘরের ভেতরে গাছ লাগানো বা নিজের শখ তৈরি করুন, যাতে একাকীত্ব কমে যায়।

বাসা বদল মানেই জীবনের নতুন অধ্যায়। প্রথমদিকে মন খারাপ হলেও ধীরে ধীরে নতুন জায়গাটিও আপন হয়ে ওঠে। মানুষের স্বভাবই হলো মানিয়ে নেওয়া। তাই নতুন বাসা ও পরিবেশকে সময় দিন, ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন। একদিন হয়তো এই নতুন ঠিকানাটিও হয়ে উঠবে আপনার কাছে আগের বাসার মতোই স্মৃতিময় ও প্রিয়।

সূত্র: হেলথ লাইন, রিসার্চ গেট, পাবমেড, মনার্ক ওয়েলনেস.কম

আরও পড়ুন
অফিসের এসি ব্যবহারে শরীরের ৭টি মারাত্মক ক্ষতি 
সিরিয়াস মুহূর্তে হঠাৎ হাসি আসে কেন? 

এসএকেওয়াই/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।