টিভির পর্দায় নয়, হৃদয়ে গেঁথে থাকা সুপারহিরোর নাম মুকেশ খান্না
একটা সময় ছিল, সন্ধ্যা নামলেই টিভির সামনে বসে যেত এক প্রজন্ম। পর্দায় ভেসে উঠত এক বিস্ময়কর চরিত্র ‘শক্তিমান’। তবে এ শুধু একটা চরিত্র নয়, এক বিশ্বাস, এক ন্যায়বোধের নাম। যিনি শুধু শিশুদের নয়, বড়দের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সততা, সাহস আর আদর্শের বীজ তিনি মুকেশ খান্না। শক্তিমান কিংবা মহাভারতের ভীষ্ম প্রতিটি চরিত্রে তিনি নিজেকে নয়, সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার কণ্ঠে ছিল দায়িত্ব, চোখে ছিল দৃঢ়তা আর মনে ছিল নীতির দীপ্তি। তাই তো তিনি শুধুমাত্র টেলিভিশনের পর্দায় নয়, গেঁথে আছেন কোটি হৃদয়ের অন্দরে চিরকালীন এক সুপারহিরো হয়ে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৫৮ সালের এই দিনে ভারতের মুম্বাই শহরে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, সংস্কৃতিমনা এবং আদর্শনিষ্ঠ।
-
মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া থেকে অভিনয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। ক্লাসমেটদের মধ্যে ছিলেন নাসিরউদ্দিন শাহ ও শত্রুঘ্ন সিনহার মতো তারকারা।
-
শুরু থেকেই তার মধ্যে ছিল কিছু আলাদা, কিছু গম্ভীর আর দৃঢ় এক উপস্থিতি। চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করলেও মুকেশ খান্নার প্রকৃত পরিচিতি আসে ছোটপর্দা থেকেই।
-
১৯৮৮ সালে ভারতীয় টেলিভিশনের ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ‘মহাভারত’ এ ভীষ্ম পিতামহ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। এই চরিত্রে তার গম্ভীর কণ্ঠ, গঠনগত ভাষা ও আবেগ মিলে তাকে করে তোলে অবিস্মরণীয়।
-
এরপর আসে সেই চরিত্র, যা তাকে শুধু ভারত নয়, উপমহাদেশব্যাপী শিশু-কিশোরদের কাছে এক কিংবদন্তি করে তোলে ‘শক্তিমান’। ১৯৯৭ সালে শুরু হয় ভারতের প্রথম সুপারহিরো ভিত্তিক ধারাবাহিক ‘শক্তিমান’।
-
টিভির পর্দায় প্রতিদিন দুপুর কিংবা সন্ধ্যায় ভেসে উঠত সেই চশমাধারী বিনীত সাংবাদিক ‘গঙ্গাধর’, যিনি বিপদের সময় হয়ে উঠতেন ‘শক্তিমান’। এই চরিত্র শুধু খলনায়কদের বিরুদ্ধে লড়েননি, লড়েছে সমাজের অসততা, দুর্নীতি, হিংসা আর অসচেতনতার বিরুদ্ধে। প্রতিটি পর্বের শেষে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক বার্তা দিয়ে মুকেশ খান্না সমাজ গঠনের কাজে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। শক্তিমান ছিল শুধুই বিনোদন নয়, একটা আদর্শ নির্মাণের চেষ্টাও।
-
শুধু অভিনয় নয়, শক্তিমান চরিত্রের পেছনে প্রযোজক হিসেবেও ছিলেন মুকেশ খান্না। তিনি নিজের প্রোডাকশন হাউজ ‘ভীষ্ম ইন্টারন্যাশনাল’ এর ব্যানারে এই সিরিজ নির্মাণ করেন। এই প্রতিষ্ঠানটির নামও ভীষ্ম চরিত্রের প্রতি তার মমতা আর বিশ্বাসকে তুলে ধরে।
-
পরবর্তীতে তিনি ভারতের চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
-
২০২০ সালে তিনি আলোচনায় আসেন তার কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক মন্তব্যের কারণে, যদিও সবসময়ই তিনি নিজের বক্তব্যে দৃঢ় থেকেছেন।
-
যখন ডিজিটাল যুগে নানা সুপারহিরো এসেছে, তখনও ভারতীয় শিশুদের মনে এক অনন্য আসন ধরে রেখেছে শক্তিমান। সে সময়ের যারা শিশুকাল কাটিয়েছে, তাদের কাছে শক্তিমান মানে এক আবেগ, এক নায়কের চেয়েও বড় কিছু। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন কেউ নৈতিকতা, সাহস আর দায়িত্ববোধের সুপারহিরো খুঁজে, তখনও মুকেশ খান্নার সেই চরিত্র চোখে ভেসে ওঠে।
-
মুকেশ খান্না আজীবন অবিবাহিত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বিয়ে করতাম, শক্তিমান হতো না। আমি সময়, শ্রম ও মনোযোগ পুরোপুরি দিয়েছি সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছায়।’ তিনি বিশ্বাস করেন, একজন শিল্পীর দায়িত্ব কেবল বিনোদন দেওয়া নয়, সমাজকে কিছু মূল্যবোধ শেখানোও তার দায়িত্বের অংশ।