প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে ‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ২৫ জুন ২০২২
সুধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয় উল্লেখ করেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার চরণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’।

শনিবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, জামিলুর রেজাসহ সেতু নির্মাণের সময় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। যখনই কোনো সেতু বা কোনো কাজ করতে যাই তখনই অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে মানসিক চাপে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, আমার বোন শেখ রেহানা, আমার সন্তান জয়, পুতুল, ববিসহ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হয়। সৈয়দ আবুল হোসেন, যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেনসহ অন্যদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। তাদের যে মানসিক চাপে ফেলা হয়েছে সেজন্য সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। আমিও আনন্দিত। অনেক বাধা উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। এই সেতু আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতার শক্তি। এর সঙ্গ জড়িত আমাদের আবেগ, সহনশীলতা এবং প্রত্যয়। সেতু তৈরি করবো সেই জিদ, প্রত্যয় ছিল আমাদের।

তিনি বলেন, যদিও সেতু উদ্বোধন করতে দুই বছর বিলম্ব হয়। কিন্তু আমরা হতাশায় ভুগিনি। শেষ পর্যন্ত আমরা অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে আসতে সমর্থ হয়েছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। তাই বলতে চাই, শাবাশ বাংলাদেশ। আমরা মাথা নোয়াইনি, মাথা নোয়াবো না। এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়। বঙ্গবন্ধু কখনোই মাথা নত করেননি, তিনি মাথা নত করতে শেখাননি।

তিনি বলেন, অনেক আলোচনার পর যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও নির্মাণে টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার দেশের কোনো এক স্বনামধন্য ব্যক্তি তিনি একটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। আইনগতভাবে এমডি পদে থাকতে পারেন ৬০ বছর পর্যন্ত। কিন্তু তার ৭০ বছর হয়ে গিয়েছিল, তখনও তিনি এমডি পদে বহাল। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে বলেছিল আপনি তো এভাবে থাকতে পারেন না। তাকে সেই ব্যাংকের উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ক্ষেপে যান। তিনি গভর্নরের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন এবং মামলায় হেরে যান। পরে আমরা দেখলাম বিশ্বব্যাংক সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গেলো দুর্নীতির অভিযোগ এনে। পরে অনেক পানি ঘোলা হলো, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করলাম। বিশ্বব্যাংক মামলা করলো, কিন্তু কানাডার আদালত রায় দিলো বিশ্বব্যাংকের যত অভিযোগ তা ভুয়া। কোনো দুর্নীতি এখানে হয়নি। তারপর তারা থেমে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ। আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। যতই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমার ছেলেমেয়েদের ওপরও কম ধকল যায়নি। যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে গেলো তখন বলেছিলাম পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করবো। জামিলুর রেজাসহ যে উপদেষ্টা কমিটি করেছিলাম তারা কিন্তু বিশ্বাস রেখেছিল, তারা থেমে যায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বলেছিল নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব না, তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাদের আত্মবিশ্বাসের দৈন্য আছে। আজ থেকে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পদ্মা সেতু কিন্তু মানুষের সহায়তায় করতে হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল। বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী অ্যামাজনের পরই পদ্মা। এর গতিধারা ধারণা করা খুবই কষ্টকর। এখানে সেতু করা খুব কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু আমরা সেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। সেতু নির্মাণে কোনো আপস করা হয়নি। এটা একটা আশ্চর্য সৃষ্টি। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর সুফল পাবে।

আইএইচআর/কেএসআর/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।