ঘূর্ণিঝড় রিমাল

বেড়িবাঁধে ভাঙন-ব্লকধস, আতঙ্কে বলেশ্বর তীরের বাসিন্দারা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট
প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, ২৬ মে ২০২৪

বাগেরহাটের শরণখোলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্যনির্মিত বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ৬২ কিলোমিটারের এ বাঁধের বলেশ্বর নদের তীরের প্রায় ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ১১টি স্থানে ভাঙন ও সিসি ব্লকে ধস দেখা দিয়েছে।

বাঁধের এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পূর্বাভাসে বলেশ্বর তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বলেশ্বর নদে প্রবল জলোচ্ছ্বাস হলে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সিডর বিধ্বস্ত এ জনপদের বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইাআইপি-১) মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বাঁধের কাজ শুরু হয়। কাজটি পায় সিএইচডব্লিউই নামে একটি চীনা নির্মাণপ্রতিষ্ঠান। তিন বছরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা কারণে কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। প্রায় সাত বছর লেগে যায় কাজ শেষ হতে। গতবছরের ১৪ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাঁধটি হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হওয়ায় বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল, বেড়িবাঁধে ভাঙন-ব্লকধস, আতঙ্কে বলেশ্বর তীরের বাসিন্দারা

ভাঙনকবলিত স্থানগুলো হচ্ছে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর তীরের বগী, গাবতলা, বাবলাতলা, তাফালবাড়ী, রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর, জিলবুনিয়া, বড়ইতলা, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর মারকাজ মসজিদ, বটতলা, পূর্ব খোন্তাকাটা এবং মোরেলগঞ্জ অংশের ফাসিয়াতলা। তবে, এসব এলাকার মধ্যে সাউথখালীর বাবলাতলার আমির আলী খানের বাড়ির সামনের বাঁধের ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে।

রোববার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা ও বাবলাতলা এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনের ক্ষত। বাঁধের গাইড ওয়াল ধসে আগেই বিলীন হয়ে গেছে। এখন সিসি ব্লক ধসে নদীতে নেমে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে গাবতলায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও সেখানে ভাঙনরোধ হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল, বেড়িবাঁধে ভাঙন-ব্লকধস, আতঙ্কে বলেশ্বর তীরের বাসিন্দারা

গাবতলা বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী, বাঁধের পাশের বাসিন্দা পারভেজ খান, বাবুল হাওলাদার ও বজলুর রহমান জানান, বাঁধের ভাঙনে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন। কখন জানি আবার সেই সিডরের মতো জলোচ্ছ্বাস তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়! ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে তারা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাকির হাওলাদার বলেন, বগী থেকে বাবলাতলা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিনই বাঁধ রক্ষায় বসানো সিসি ব্লক নদীতে নেমে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা না হলে ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে না।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল, বেড়িবাঁধে ভাঙন-ব্লকধস, আতঙ্কে বলেশ্বর তীরের বাসিন্দারা

সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় হস্তান্তর হতে না হতেই ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের আগে নদী শাসন করা উচিত ছিল। ভাঙন এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখানে জিও ব্যাগে বালু ভরে ডাম্পিং করা হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। ভাঙনকবলিত স্থানগুলোতে ব্লক ডাম্পিং কর হলে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী বলেন, বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ভাঙন এলাকায় প্রাথমিকভাবে বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে। স্থায়ী নদী শাসনের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলেই ব্লক ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু হবে।

এসআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।