‘বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি, ময়লা পানি মাড়িয়েই অফিসে ঢুকতে হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৯ পিএম, ২৮ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অতিভারী বর্ষণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। অনেকে পানি মাড়িয়েই গন্তব্যে ছুটছেন।

নাগরিকদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে নগরে জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু এ জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন তেমন কোনো কাজ করছে না। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পরও সড়কে পানি জমে থাকে। আর পানিতে ড্রেন, নালার বর্জ্য ছড়িয়ে থাকায় হচ্ছে চর্মরোগ।

রাজধানীর মহাখালী, বনানী, গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কগুলোতে পানি না জমলেও ভেতরে কিছু সড়কে পানি জমেছে। বিশেষ করে মহাখালীর সাততলা বস্তি থেকে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যাওয়ার সড়কে পানি জমেছে। এ সড়কের দুপাশে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার এবং যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থার সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। এরমধ্যে যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থার পানি কমাতে মোটর লাগানো হয়েছে। এরই মধ্যে পানি মাড়িয়ে অফিস ঢুকছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থার ফটকে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করছিলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই এখানে পানি জমে যায়। সেচ না দিলে পানি নামতে দুই তিন দিন লেগে যায়। তাই বৃষ্টি হলেই মোটর লাগাতে হয়। গতকাল সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে মোটর চালিয়েছি। এখন পর্যন্ত চলছে। কিন্তু পানি আর কমছে না।

আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন প্রধান ফটক থেকে বুট জুতা পরে অফিসে ঢুকছিলেন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থার কর্মকর্তা মকবুল আলম। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। ময়লা পানি মাড়িয়েই অফিসে ঢুকতে হয়। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

‘বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি, ময়লা পানি মাড়িয়েই অফিস ঢুকতে হয়’

একইভাবে বনানীর কড়াইল বস্তির কয়েকটি গলিতে পানি জমতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৩০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করেছে। গতকাল থেকে শতাধিক স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে পুরো কার্যক্রম নগর ভবনের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক তদারক করা হয়েছে। তারপরও কোথাও পানি জমে থাকলে সিটি করপোরেশনের হটলাইন নম্বর ১৬১০৬-এ কল দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে রাজধানীর কাঁঠালবাগানে সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। ওই এলাকার পানি মাড়িয়ে সকালে কারওয়ান বাজারে একটি ব্যাংকে গেছেন এস এম উজ্জ্বল। মুঠোফোনে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কাঁঠালবাগানে বৃষ্টির পানিতে গলিগুলো তলিয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন এ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজ করছে না। ময়লা পানিতে হাঁটাচলা করায় মহল্লার লোকজনের চর্মরোগ হচ্ছে।

গত বছরের মতো এবারও ঢাকা নিউ মার্কেটের দক্ষিণ ফটকের সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। সকালে এ পানি মাড়িয়েই লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারিবাগের হাজারো মানুষকে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। আজিমপুর ইরাকি মাঠ সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় বাস করেন শাহআলম খান। সকাল ১০টায় বাসার সামনে থেকে রিকশায় করে নীলক্ষেত যান তিনি।

আলাপকালে শাহআলম বলেন, ভারী বর্ষণ হলে নিউমার্কেটের দক্ষিণ ফটকের দুপাশের ফুটপাত তলিয়ে যায়। চাইলেও হেঁটে যাওয়া যায় না। তাই সবাইকে রিকশায় চলতে হয়। সিটি করপোরেশন এ জলাবদ্ধতা নিরসনে তেমন কোনো কাজ করছে না। শুধু গতকাল বৃষ্টি চলাকালে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ড্রেন, নালার মুখে জমে থাকা বর্জ্য পরিষ্কার করতে দেখেছি।

নিউ মার্কেটসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৯১টি দল কাজ করছে বলে জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের। তিনি বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।সেখানে নতুন নর্দমা সংযোগ প্রতিষ্ঠায় দরপত্র কার্যক্রম চলমান। এছাড়া গ্রিনরোডসহ অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ডিএসসিসি। তারপরও কোথাও বৃষ্টিপাতজনিত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে নগরবাসীকে ০১৭০৯৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এমএমএ/এমএইচআর/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।