নাসিরের বাসায় ‘উঠতি বয়সী নারীরা’ এসে মদ পান করতো : পুলিশ
ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বাসায় ‘উঠতি বয়সী নারীরা’ এসে মদ পান করতো বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর-তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর ও উত্তরা) এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানকালে নাসিরের বাসা থেকে বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। তার বাসায় উঠতি বয়সী নারীরা এসে মদ পান করতেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। নাসিরের বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন ছিল।
হারুন-অর-রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হবে।
পরীমনি কেন ওই ক্লাবে গিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব বিষয় নজরে এনে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
এর আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাভার থানায় নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমনি।
ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, পরীমনি নিজে বাদী হয়ে মোট ছয়জনের নামে এ মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-৩৮।
এর আগে রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি।
নাসিরের বাসা থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধার
ফেসবুক পেজে পরীমনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
পরীমনি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
পরীমনির স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব। তবে, কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা নিশ্চিত, তিনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।’
এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে ‘নির্যাতনকারীদের’ নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন পরীমণি।
তিনি দুজনের নাম প্রকাশ করে জানান, তাদের একজন রাজধানীর উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ. মাহমুদ এবং অন্যজন তার (পরীমনি) কস্টিউম ডিজাইনার জেমীর স্কুলবন্ধু অমি নামের এক ব্যবসায়ী।
পরীমনি বলেন, ‘গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। ওই সময় নাসির ইউ. মাহমুদ নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাসির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
টিটি/এমএসএইচ/এমকেএইচ