‘পরীমনি জেলে থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২১

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে জানিয়ে জামিনের আবেদন করেছেন তার আইনজীবী। আবেদনে পরীমনির জামিন দেওয়ার জন্য আটটি কারণ তুলে ধরেছেন আইনজীবী মুজিবুর রহমান।

রোববার (২২ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরীমনির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে গতকাল (২১ আগস্ট) দুপুরে পরীমনিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা তাকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম পরীমনির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৩ আগস্ট ছয়দিনের রিমান্ড শেষে পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।

এ সময় আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের দেখা করার আবেদনটি নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর পরীমনিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ৫ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগীকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বনানী থানার মামলায় তাদের প্রথম দফায় চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ রিমান্ড শেষে ১০ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর দ্বিতীয় দফায় দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। অভিযানে এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। পরীমনির ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস এবং ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।

এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে র‌্যাব সদর-দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে পরীমনি, চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে করে বনানী থানার উদ্দেশে রওনা দেয় র‌্যাবের একটি টিম।

এরপর র‌্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি ‘মিনিবার’ তৈরি করেন। তিনি বাসায় নিয়মিত ‘মদের পার্টি’ করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন ও পার্টিতে অংশ নিতেন।

পরীমনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও পাঁচ-সাতটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। প্রযোজক রাজ তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় সিনেমা জগতে নিয়ে আসেন।

যে আটটি কারণে পরীমনির জামিন চান আইনজীবী

১. আসামি একজন নারী; ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৪৭ (১) (গ) মোতাবেক জামিন পেতে পারেন। জামিন পেলে আসামি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করবেন না।

২. আসামি দীর্ঘ ছয়দিন রিমান্ডে থাকাসহ প্রায় ২৬ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৩. আসামি vertigo এবং ‘পেনিক অ্যাটাক’র রোগী, দীর্ঘ সময় পুলিশ কাস্টডিতে অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার স্বার্থে দরখাস্তকারী আসামিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।

৪. আসামির দখল ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মদ ও মাদক উদ্ধার হয়নি। আসানি নির্দোষ, ষড়যন্ত্রের শিকার বিধায় আসামিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।

৫. পরীমনিকে আটক করা হয় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে, উদ্ধার দেখানো ও জব্দ তালিকা তৈরি হয় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২৩ (১) (২) ধারার সুস্পষ্ট লংঘন। জব্দ তালিকায় বর্ণিত জব্দের স্থান সম্পর্কে ভিন্নতা রয়েছে।

৬. এজাহার মোতাবেক ঘটনার অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব টিম দ্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ এর ৬ এবং ৬ এ ধারা লংঘন করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ফলে একটি ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করার কারণে আসামি জামিন পাওয়ার হকদার।

৭. আসামি পরীমনি একজন প্রথমসারির চিত্রনায়িকা। তিনি ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত। আসামি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতার সঙ্গে শিল্পী হিসেবে চুক্তিসমূহের শর্ত লঙ্ঘিত হবে। সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক সরকারি সিনেমার জন্য ফটোশুট হয়েছে। ফলে আসামিকে যে কোনো শর্তে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক। অন্যথায় ন্যায়বিচার পরাভূত হবে।

৮. জামিনের সপক্ষে অপরাপর আইনানুগ হেতুবাদসমূহ শুনানিকালে নিয়োজিত আইনজীবীর বাচনিকে প্রকাশ পাবে।

জেএ/এমআরএম/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।