নাসির-অমিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা
ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫), তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)।
রাতে বিমানবন্দর থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মশিউর আলম জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি উত্তর বিভাগের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই বাসায় অভিযানকালে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
পরীমনি কেন ওই ক্লাবে গিয়েছিলেন, তা জানতে চাইলে হারুন-অর-রশীদ বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব বিষয় নজরে এনে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
এর আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সোমবার বেলা ১২টার দিকে সাভার থানায় নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমনি।
সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, পরীমনি নিজে বাদী হয়ে মোট ছয়জনের নামে এ মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-৩৮।
উল্লেখ্য, রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রথমে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি।
পরীমনি লেখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমনি। এই দেশের একজন নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
‘এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি চারদিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধু বেনজীর আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাই না মা। যাদের পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
পরীমনি আরও লেখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
‘আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো মনে হয়নি আমার মাকে খুব দরকার। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
ওই স্ট্যাটাস দেয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের কাছে ‘নির্যাতনকারীদের’ নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন পরীমনি।
তিনি দুজনের নাম প্রকাশ করে জানান, তাদের একজন রাজধানীর উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং অন্যজন অমি।
পরীমনি বলেন, ‘গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির উদ্দিন মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। ওই সময় নাসির নিজেকে ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। সেখানে নাসির আমাকে মদ খেতে অফার করেন। রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
পরীমনির স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘তিনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব। তবে, কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা নিশ্চিত, তিনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।’
টিটি/জেডএইচ/