শুরু হয়েছিল মার্সেইর গলিতে, শেষটা ফুটবলের স্বর্ণপৃষ্ঠায়
শুরুটা হয়েছিল মার্সেইর এক অভিবাসী-অধ্যুষিত গলিতে। ছোট্ট এক ছেলের চোখে তখন ফুটবল মানে ছিল খেলার আনন্দ, আর পায়ে বল মানেই ছিল জীবনের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার প্রথম ধাপ। সেই ছেলেটির নাম জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। ফ্রান্সের এক অচেনা কোণ থেকে উঠে এসে তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্ব ফুটবলের চূড়ায় বসা এক মহাতারকা। মাঠের প্রতিটি ছোঁয়ায় ছিল শিল্প, প্রতিটি চালে ছিল দর্শন। শুরু হয়েছিল নিঃশব্দে, অথচ শেষটা লেখা হলো ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ে স্বর্ণাক্ষরে। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৭২ সালের এই দিনে ফ্রান্সের মার্সেই শহরের উপকণ্ঠে লা কাস্তেলানে তার জন্ম। জিদানের বাবা-মা ছিলেন আলজেরিয়ান অভিবাসী।
-
অর্থনৈতিক সংকট আর সামাজিক বৈষম্যের মধ্যে বড় হওয়া জিদানের জীবনযাত্রা সহজ ছিল না। কিন্তু ফুটবল তার জন্য ছিল মুক্তির এক পথ, ছিল আত্মপ্রকাশের এক শক্তিশালী মাধ্যম।
-
মাত্র ১৪ বছর বয়সে কান ক্লাবে ভর্তি হয়ে ফুটবলের মূলধারায় প্রবেশ করেন জিদান। এরপর বোর্দোতে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স চোখে পড়ে ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর।
-
১৯৯৬ সালে জুভেন্টাসে যোগ দিয়ে তিনি ইউরোপের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন।
-
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক ফ্রান্সের হয়ে জিদান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালে দুইটি হেডে গোল করে দলকে এনে দেন প্রথম বিশ্বকাপ।
-
২০০০ সালে ইউরো জয়ের পেছনেও ছিল তার অনবদ্য ভূমিকা। তার খেলা মানেই ছিল মাঠে শিল্পের প্রকাশ।
-
২০০১ সালে তখনকার রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে, যেখানে গ্যালাক্টিকোস যুগের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন জিদান।
-
২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় মুহূর্ত। ইতালির খেলোয়াড় মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে আঘাত করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জিদান। অনেকেই হতাশ হয়েছিলেন তার এমন বিদায়ে। কিন্তু কেউ অস্বীকার করতে পারেননি, সেই ম্যাচেও তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি আলোচিত।
-
খেলা ছাড়ার পর কোচ হিসেবে আবারও নিজেকে প্রমাণ করেন জিদান। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হয়ে পরপর তিনবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে গড়েন অনন্য এক ইতিহাস। তার নেতৃত্ব, খেলোয়াড়দের প্রতি আস্থা আর কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা নতুন করে চিনিয়েছে ‘জিজু’ নামটিকে।
-
জিদান খেলোয়াড় হিসেবে যেমন শৃঙ্খলার প্রতীক ছিলেন, তেমনি কোচ হিসেবেও ছিলেন কৌশলের জাদুকর। চার সন্তানের জনক এই কিংবদন্তি তার পারিবারিক জীবন নিয়ে কখনো আলোচনায় আসেননি, চেয়েছেন ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে।
-
জিদান কিংবদন্তি শুধু তার গোলের জন্য নয়, বরং তার খেলার স্টাইল, মাঠের কৌশল, দলকে উজ্জীবিত করার ক্ষমতা আর অনন্য নেতৃত্বগুণের জন্য। তিনি প্রমাণ করেছেন নম্রতা আর প্রতিভার যুগলবন্দিই একজন খেলোয়াড়কে মহাতারকা করে তোলে।