ওদের চোখে এখন শুধুই ‘অন্ধকার’

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ১১ জুন ২০২২

# চোখের সমস্যা নিয়ে চমেক হাসপাতালের বেডে ৩৩ দগ্ধ ব্যক্তি
# ঘোলাটে হয়ে আসছে তিন-চারজনের চোখের কর্নিয়া

ট্রাকচালক রজব মণ্ডলের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাসানচর গ্রামে। হা-মিম গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চালাতেন রজব। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের দিন ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে এসেছিলেন ডিপোতে। ওইদিন রাতে বিস্ফোরণের সময় ছিলেন ঘটনাস্থলেই। বিস্ফোরণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি কানের পর্দাও ফেটেছে তার। এখন কানে যেমন শুনছেন না, ঝাপসা দেখছেন চোখেও। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতালেই কথা হয় রজবের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিএম ডিপোতে হা-মিম গ্রুপের চারটি কাভার্ডভ্যানে পণ্য আসে ওইদিন। দুটি আনলোড হয়েছিল। বাকি দুটি রাতে আনলোড হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে আগুন লাগে। আমি দূর থেকে দেখছিলাম। আধঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আসে। ফায়ার সার্ভিস পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিস্ফোরণ হয়। আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার সঙ্গে থাকা একজন পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন। আরেকজন আইসিইউতে।

রজব বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দের পর থেকে আমি কানে শুনছি না। আবার চোখেও ঝাপসা দেখছি। শুধু কান কিংবা চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, শরীরের কিছু অংশ পুড়েও গেছে।

খুলনার দৌলতপুর থানার নওশাপাশা মানিকতলা গ্রামের মো. আমির হোসেন পেশায় ট্রাকচালক। খুলনা থেকে পাটপণ্য নিয়ে এসেছিলেন বিএম কনটেইনার ডিপোতে। বিস্ফোরণে তার শরীরও পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চোখ।

চমেক হাসপাতালের বেডে শুয়ে আমির হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর আমরা দূর থেকে দেখছিলাম। একপর্যায়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। আগুনের ঝলকানিতে আমার শরীর পুড়ে যায়। এরপর থেকে খোলা চোখে দেখতে পাচ্ছি না। হাসপাতাল থেকে কালো চশমা দেওয়া হয়েছে।

শুধু রজব কিংবা আমির নন, সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩ জন চোখের সমস্যা নিয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শরীরের অন্য অংশ পুড়েছে, পাশাপাশি চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকেন্দ্রের আন্তরিকতায় অনেকে ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। আবার কারও চোখের কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে আসছে।

শনিবার (১১ জুন) বেলা ১১টা থেকে হাসপাতালে থাকা সীতাকুণ্ডের ঘটনায় আহত রোগীদের দেখছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তনুজা তানজিন। হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডে দুপুরে কথা হয় এ চিকিৎসকের সঙ্গে।

ওদের চোখে এখন শুধুই ‘অন্ধকার’

ঘোলাটে হয়ে আসছে বিস্ফোরণে আহত তিন-চারজনের চোখের কর্নিয়া

অধ্যাপক ডা. তনুজা তানজিন জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে এখনো ৩৩ জন চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের কেউ বার্ন ইউনিটে, কেউ অর্থোপেডিক্সে, কেউ চক্ষু ওয়ার্ডে, কেউ সার্জারি, কেউ নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে এবং একজন ইউরোলজি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি তাদের শরীরের অন্য অংশও পুড়েছে। এরই মধ্যে অনেকে সেরে উঠছেন। তবে আমরা তিন-চারজনকে দেখেছি, তাদের চোখের কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে আসছে। এটি আশঙ্কার কথা। আমরা তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। যাদের কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে আসছে, তাদের যদি আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে এই চিকিৎসক জানান।

গত ৪ জুন (শনিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। রাত ১০টার পর আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ১২টার পর থেকে আসতে থাকে মৃত্যু খবর। সময় যত গড়াতে থাকে, মৃতের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে।

এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৬ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এসব মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এখনো ১৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের মধ্যে এখনো ৯৯ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা-শিশু হাসপাতাল, পার্কভিউ হসপিটালসহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেও ভর্তি অনেকে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

ইকবাল হোসেন/কেএসআর/ইএ/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।