বেইলি রোডে আগুন

‘আতঙ্কে ছোটাছুটি করছিল মানুষ, অনেকেই ছাদ থেকে লাফ দেয়’

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৪
আগুনে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আহত হন।

রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের সময় দুই কর্মচারী ভবন ও ছাদ থেকে লাফিয়ে বেঁচে ফেরেন। তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসি) ১০২ নাম্বার ওয়ার্ডে। সেখানে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। তাদের মুখেই জানা গেলো ভয়াবহ ঘটনার বিস্তারিত।

জুবায়ের ছয় মাস ধরে কাজ করছিলেন বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবনের চারতলার খানাস নামে একটি রেস্টুরেন্টে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালমারী থানায়।

আরও পড়ুন

জুবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার সময় আমি শেক বানাচ্ছিলাম। পরে আমাদের ক্যাশিয়ার বলছিল নিচে আগুন লাগছে। সবাই উপরে আসেন। এসময় অ্যাপ্রোন খুলে নিচের দিকে যেতে চাইলে তখন দেখি নিচে অনেক বেশি ধোঁয়া। নামার পরিস্থিতি নেই। এরপর দ্রুত ছাদে উঠে যাই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম ছাদে। সেখানে মানুষজন আতঙ্কে চিৎকার করছিল, কান্নাকাটি করছিল। কয়েকজন ছাদ থেকে লাফ দেয়। একটু পর আমিও লাফ দেই। এরপর কী হয়েছে তা আমার মাথায় নেই।

তিনি আরও বলেন, খানাস ফাস্ট ফুড হওয়ায় অনেক ক্রেতা আসে। তবে গতকাল অন্যদিনের চেয়ে একটু কম ছিল। ভবনে ১২টার বেশি রেস্টুরেন্ট ছিল। এছাড়া ভবনে ওঠানামার জন্য ছোট একটি সিঁড়ি আর লিফট ছিল। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে নামার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

জুবায়েরের মা তার পাশেই বসে ছিলেন। একটু পরপরই কান্না করছিলেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ রাত ১১টার দিকে আমাদের কল দেয়। আমরা ঘুমাচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে আপনাদের কেউ কি ঢাকায় থাকে? এরপর জুবায়ের থাকে বললে তারা জানায়, জুবায়ের অ্যাক্সিডেন্ট করেছে আপনারা দ্রুত চলে আসেন। এরপর আমরা গাড়ি খবর দিয়ে হাসপাতালে চলে আসি। কাল আমার পরিবারের ওপর খুবই কঠিন দিন নেমে এসেছে। আমার বড় ছেলে দুবাই থাকে। সেখানেও রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সেও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছে কাজ করতে গিয়ে। আমার হার্টের সমস্যা বেড়ে গেছে। ঢাকায় আসার প্রস্তুতির সময় তার বাবা রাস্তার পাশে পড়ে গেলে তাকেও নিয়ে আসিনি। নিজে চলে এসেছি।’

আরও পড়ুন

অন্যদিকে, নিচতলায় মেজবানি খানা নামে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন কামরুল। ঘটনার সময় তিনি দোকানের ভেতরে কাজ করছিলেন। আগুনের খবরে সেখান থেকে পঞ্চম তলায় উঠে যান।

কামরুল বলেন, ‘পাশের দোকান থেকে হঠাৎ করে আগুনের কথা শুনতে পাই। আর সাথে সাথে দেখি সব অন্ধকার হয়ে পড়েছে। আমরা ছোটাছুটি শুরু করি। কোনো দিকে যেতে পারছিলাম না। পরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম। আর সেখানে অনেক লোক থাকায় উপরেও উঠতে পারছিলাম না, আটকে পড়েছি। একটা কিচেনে ঢুকে সেখানের গ্রিল দিয়ে নামতে যাই। এমন সময় আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। পরে সেখান থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যাই। এরপর আর হুঁশ ছিল না। সে সময় চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া ছিল। সেখানকার মানুষজন শ্বাস নিতে পারছিলেন না। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। চারদিক বদ্ধ অবস্থা ছিল সেখানে। আর সেখানে আরো আগুনের তীব্রতা বাড়ায় অনেকে হয়তো মারা গেছেন।’

এএএম/এসএনআর/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।