অন্যের কষ্ট বুঝি
তুরস্ক-সিরিয়ায় ছুটছেন ফিলিস্তিনিরা
বছরের পর বছর দখলদারদের ধ্বংসযজ্ঞ স্বচক্ষে দেখে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। এ কারণে প্রিয়জন আর ঘর হারানোর ব্যথা খুব ভালো করেই বোঝেন তাদের প্রতিটি মানুষ। তাই তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ভয়াবহতা দেখে আর স্থির থাকতে পারেননি তারা। দলবেঁধে দেশ ছেড়েছেন দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিতে চলেছেন ফিলিস্তিনিরাও।
প্যালেস্টাইন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (পিআইসিএ) নেতৃত্বে ৭৩ জনের একটি উদ্ধারকারী দল বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাসে করে রামাল্লা ছেড়েছে। দলটিতে ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা রয়েছেন।
আরও পড়ুন>> বাঁচার আশা নিভুনিভু
ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারী দলটি প্রথমে জর্ডানে যাবে। সেখানে সমান দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় পৌঁছাবে।
পিআইসিএ’র প্রধান এমাদ জুহাইরি বলেছেন, ফিলিস্তিনে চাহিদা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও তাদের দলটি তুরস্ক-সিরিয়ার সাহায্যের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেনি। তার কথায়, ‘কারণ, আমরা কষ্টে রয়েছি, এ জন্য অন্যের দুঃখও বুঝতে পারি।’
আরও পড়ুন>> যে দৃশ্যে বুক কাঁপে
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পিআইসিএ এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। সম্প্রতি বিধ্বংসী বন্যার পর পাকিস্তানে দেখা গিয়েছিল তাদের।
তুরস্ক-সিরিয়ায় ফিলিস্তিনিদের উদ্ধার অভিযান অন্তত ১০ দিন চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজন হলে তারা আরও বেশিদিন থাকবেন।
জুহাইরি বলেছেন, এ ধরনের অভিযানে কী কী বাধার মুখে পড়তে হতে পারে তার দলটি সে বিষয়ে ভালোভাবেই জানে।
আরও পড়ুন>> সিরিয়ায় প্রথম সহায়তা পৌঁছালো তিন দিন পর
অধিকৃত পশ্চিম তীরের মধ্যে এবং বাইরে সীমান্ত ক্রসিংগুলোর নিয়ন্ত্রণ দখলদার ইসরায়েলের হাতে। এ কারণে ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারী দলটির জন্য ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করা আবশ্যক ছিল।
জুহাইরি বলেন, আমরা সঙ্গে করে কিছু ভারী সরঞ্জাম আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তা সম্ভব হয়নি। এ কারণে ফিলিস্তিনি দলটিকে শুধু হালকা ও সাধারণ সরঞ্জামই ব্যবহার করতে হবে।
তুরস্ক-সিরিয়ায় গত সোমবারের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। কেবল তুরস্কেই মারা গেছেন ১৬ হাজার ১৭০ জন। সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৯২ জনে। এর মধ্যে সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রাণহানি হয়েছে ১ হাজার ২৬২ জন এবং বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ৯৩০ জন। ফলে দুই দেশ মিলিয়ে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৬২ জন।
আরও পড়ুন>> বেঁচে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্মানো শিশুটি
ভূমিকম্পের পর এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৮৪ ঘণ্টার বেশি। উদ্ধারকাজ বহু বাকি। এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে সময় যত যাচ্ছে, তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
কেএএ/