বিশ্লেষকদের মত

মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৩
ছবি সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুত ইসরায়েল। চূড়ান্ত অভিযানের আগে দক্ষিণ গাজার ১০ লক্ষাধিক বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে যেতে সময় বেঁধে দিয়েছিল তারা। সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় ইসরায়েলি বাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলে পড়তে পারে গাজাবাসীর ওপর। তার আগেই বিমান হামলা চালিয়ে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। স্থল অভিযান শুরু হলে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ধারণা করা কঠিন।

এ অবস্থায় ইসরায়েলকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। তেহরান বলেছে, গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে ‘সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ ভোগ করতে হবে ইসরায়েলকে।

আরও পড়ুন>> গাজায় ভূমি দখলের ছক এঁকেছে ইসরায়েল

গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, চীন-রাশিয়ার মতো দেশগুলোও। প্রতিশোধের নেশায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে ইসরায়েলিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

হিজবুল্লাহর হুমকি
লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এরই মধ্যে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০০৬ সালের পর এবারই লেবানন সীমান্তে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজার পাশাপাশি ইসরায়েলের উত্তরের এই সীমান্তেও বড় ধরনের যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ও মর্টার বোমা দিয়ে শেবা ফার্মস এলাকায় ইসরায়েলের পাঁচটি সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন>> গাজা-লেবানন থেকে নতুন করে ইসরায়েলে রকেট হামলা

ইসরায়েলের কান রেডিও জানিয়েছে, লেবানন থেকে সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় সীমান্তের পাঁচটি গ্রাম লকডাউন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের দাবি, অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইরান
গত রোববার ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সিরিয়ায় মোতায়েন অথবা দেশটির ভেতর দিয়ে অন্যত্র অস্ত্র পাঠাচ্ছে ইরান। এর মাধ্যমে ইরানি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে আরেকটি সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দিতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে ইরান সংক্রান্ত একটি মন্তব্যে এই দাবি করেছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত সম্পর্ক বিভাগের প্রধান জোশুয়া জারকা।

সিরিয়ার বিমানবন্দরে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের এই প্রচেষ্টা আটকানোর চেষ্টা করেছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জোশুয়া বলেন, আমরা করেছি।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চিন্তা বাদ, ইরানে ঝুঁকছে সৌদি আরব

এর আগে গাজায় ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা’ বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন জাতিসংঘে ইরানের দূত। অন্যথায় কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ- দুটো গোষ্ঠীর সঙ্গেই ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা
মার্কিন লেখক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানী নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইনের মতে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ‘অত্যন্ত প্রবল’; বিশেষ করে, হিজবুল্লাহ যদি এই লড়াইয়ে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ে।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানকে তিনি ‘আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো এবং সেটিকে ইসরায়েলের নতুন নিরাপত্তা অঞ্চল ঘোষণা করা।

আরও পড়ুন>> ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই সংকটের একমাত্র সমাধান: পুতিন

নরম্যান কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে ইরানে হামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এ নিয়ে গত সপ্তাহে অনেক কথা হয়েছে। যদি হিজবুল্লাহ বড় আকারে (যুদ্ধে) প্রবেশ করে, তাহলে যুক্তি দেওয়া হবে, হিজবুল্লাহ ইরানেরই একটি সশস্ত্র ইউনিট এবং তাই এটি ইরানের ওপর আক্রমণকে ন্যায্যতা দেয়।

মার্কিন এই বিশ্লেষক আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি না, ইসরায়েল দুদিক থেকে সম্মুখযুদ্ধ সামলাতে সক্ষম। হিজবুল্লাহ যদি যুদ্ধে প্রবেশ করে, আর ইসরায়েল সেটি ইরানে হামলার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে (যা তারা অনেক দিন ধরেই চাচ্ছে), তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার ছাড়া আমি ইসরায়েলিদের জন্য আর কোনো উপায় দেখছি না।

সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স
কেএএ/

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।