আকাশ-জল-স্থল

তিন দিক থেকে ইসরায়েলে যেভাবে হামলা চালালো হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৩

আচমকা হামলা চালিয়ে ইসরায়েলকে পুরোপুরি চমকে দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। আকাশ, জল, স্থল- তিন পথ দিয়ে একযোগে হামলা চালায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে এ পর্যন্ত ৩০০ ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছেন। জবাবে, গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস।

যেভাবে শুরু হলো ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’

ভোর ৬টা ৩০ মিনিট: রকেট হামলা
স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ইসরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুড়তে শুরু করে হামাস। এর ফলে তেল আবিবের মতো দূরবর্তী শহরগুলোতেও বেজে ওঠে সতর্কতা সাইরেন।

হামাস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে তারা পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী অবশ্য দাবি করেছে, ২ হাজার ৫০০ রকেট ছুড়েছে হামাস।

আরও পড়ুন>> ৫ হাজার রকেট ছুড়েছে হামাস, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ ঘোষণা ইসরায়েলের

হামাসের রকেট হামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলিরা বড় বড় ভবনগুলোর আড়ালে আশ্রয় নেয়। রকেটের আঘাতে অন্তত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেন, অপারেশন আল-আকসা ফ্লাডের শুরুতে শত্রুদের অবস্থান, বিমানবন্দর এবং সামরিক দুর্গগুলোকে লক্ষ্য করে পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা ছোড়া হয়েছে।

সকালে ৭টা ৪০: অনুপ্রবেশ
ভোরের রকেট হামলা ছিল মূলত ইসরায়েলি বাহিনীর চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। এর আড়ালেই নজিরবিহীনভাবে বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র হামাস যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে।

বেশিরভাগ যোদ্ধা গাজা ও ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্নকারী নিরাপত্তা বেড়া ছিন্ন করে প্রবেশ করে। তবে অন্তত একজন হামাস যোদ্ধাকে প্যারাসুটের সাহায্যে উড়তে দেখা গেছে। এছাড়া, যোদ্ধাদের বহনকারী একটি মোটরবোটকে ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর জিকিমের দিকে যেতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে ১০০০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধা

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ধাতব ব্যারিয়ারের ছিদ্র দিয়ে অন্তত ছয়টি মোটরসাইকেল নিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। হামাসের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলিদের বসানো সীমান্তবেড়ার একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সকাল ৯টা ৪৫: ইসরায়েলি হামলা
স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ১০টার দিকে গাজা উপত্যকায় বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এর কয়েক মিনিট পরেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, গাজায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

আরও পড়ুন>> পাল্টা হামলায় ১৬০ ফিলিস্তিনিকে মারলো ইসরায়েল

সকাল ১০টা: ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা
সকাল ১০টায় ইসরায়েলের অন্তত তিনটি সামরিক স্থাপনায় প্রবেশ করেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। সেগুলো হলো বেইত হ্যানউন সীমান্ত ক্রসিং, জিকিম ঘাঁটি এবং গাজা বিভাগের সদর দপ্তর রেইম।

হামাসের শেয়ার করা ভিডিওতে যোদ্ধাদের একটি জ্বলন্ত বিল্ডিংয়ের দিকে দৌড়াতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের ওপর হঠাৎ কেন চড়াও হলো হামাস?

এরপরে বেশ কিছু ইসরায়েলি সামরিক যান গাজায় নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে প্যারেড করাতে দেখা যায় হামাস যোদ্ধাদের।

সীমান্ত শহরে হানা
ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলি শহর সেডেরট, বেইরি এবং ওফাকিম শহরে হামলা চালিয়েছে বলে জানায় ইসরায়েলি মিডিয়া।
এসময় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার পরামর্শ দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলের ওপর হঠাৎ কেন চড়াও হলো হামাস?

তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হামাস যোদ্ধারা ঢুকে পড়া এলাকাগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল।

অপহরণ ও জিম্মি
ইসরায়েলি মিডিয়ার খবর অনুসারে, ওফাকিমে বন্দুকধারীরা বেশ কিছু ইসরায়েলিকে জিম্মি করে। ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদের দাবি, তারা ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের বন্দি করেছে।

আরও পড়ুন>> ইসরায়েলে ঢুকে ইসরায়েলি সেনাদের ধরে নিয়ে গেলো হামাস

এছাড়া হামাসের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রকাশিত ফুটেজে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলি বন্দিদের গাজায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রাতভর লড়াই
শনিবার রাতভর গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তেমনি হামাসও ইসরায়েলের দক্ষিণ অংশে রকেট হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন>> আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত: হামাস

গাজা উপত্যকার কাছে অন্তত ২২টি স্থানে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলিদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।

হতাহতের সংখ্যা
রোববার সকাল পর্যন্ত হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি মিডিয়া। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৫৯০ জন। এদের মধ্যে ৩০০ জনের অবস্থা গুরুতর।

আরও পড়ুন>> হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৩০০, লড়াই অব্যাহত

আর গাজায় ইসরায়েলিদের পাল্টা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৭ জনে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।