নীলফামারীতে বানভাসিদের শুকনো খাবারের সংকট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৯

দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ঘিরে উজানের ঢলের পানির চাপ বাড়ছে। এটি বিধ্বস্ত হলে পাল্টে যেতে পারে তিস্তা নদীর গতিধারা। এমনই আশঙ্কা এলাকাবাসী। উজানের লাগামহীন ঢলের পানি অব্যাহতভাবে ধেয়ে আসায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে। স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। ভাঙছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পাকা ও কাঁচা সড়ক ডুবে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে রোববার বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত শনিবার ও শুক্রবার এই পয়েন্টে ৩৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৭৭ মিলিমিটার।

এতে ডিমলা উপজেলার তিস্তা চরের গ্রামগুলোর ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ওই সব গ্রামের রাস্তঘাট, ব্রীজ কালভার্ট, হাটবাজার বলতে কিছুই নেই। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া শনিবার রাতে ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় এলাকার অসংখ্য গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ে ডিমলা উপজেলার ৮৬টি পরিবার বসতঘর ভেঙে অন্যত্র সরে গেছে। এর মধ্যে ঝুনাগাছচাঁপানীতে ৭০ পরিবার, খালিশাচাঁপানী ও টেপাখড়িতে ৫ পরিবার করে ১০ পরিবার, খগাখড়িবাড়িতে ৪ ও পূর্বছাতনাইয়ে ২ পরিবার রয়েছে। এ সকল পরিবারকে সরকারিভাবে দেয়া নৌকায় নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের ফরেস্টের চরের সাতশ পরিবার ভেন্ডাবাড়ি চরের দুইশ পরিবার, খালিশাচাপানীতে ১১ পরিবার, খগাখড়িবাড়িতে তিনশ পরিবার, পূর্বছাতনাইয়ে ৮৯২ পরিবারের বসতঘরের ভেতর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

nilfamari-flood

জেলার ডিমলা উপজলায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধ, উঁচু সড়ক, আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। এর মধ্যে খাদ্য সংকটে পড়েছেন বানভাসিরা। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও তা রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা। এতে করে বানভাসিদের মাঝে শুকনো খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।

এদিকে শনিবার ও রোববার দুইদিনে বানভাসিদের মাঝে সরকারিভাবে দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী শুকনা খাবার পাওয়া যাচ্ছে না বলে জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া যে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেই চালও বিতরণ করা নিয়ে সমস্যা রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর বন্যা আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য ১৫০ মেট্রিকটন চাল, দেড় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুকনা খাবারগুলো বিতরণ হলেও এখনও চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়নি।

জনপ্রতিনিধিরা জানান, চালের পরিবর্তে শুকনা খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা যেতে পারে। বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

এদিকে ডিমলা উপজেলায় বন্যায় প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও জ্বর, সর্দি কাশির ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মণ।

ডিমলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন , তিস্তার পানিতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের গ্রাম ও চর এলাকা বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমরা সরকারের দেয়া নৌকায় বানভাসিদের উদ্ধার করছি। এছাড়াও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গত দুইদিনের চেয়ে তিস্তার পানির উজানের ঢল কমে এলেও এখনও বিপৎসীমার নিচে নামেনি। বিপৎসীমার (৫২.৬০) ৫০ সেন্টিমিটার থেকে নেমে এখন ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সংকেত জারি অব্যাহত রয়েছে।

জাহেদুল ইসলাম/আরএআর/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।