কমছে যমুনার পানি, টাঙ্গাইলে ১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ২২ জুলাই ২০১৯

ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে টাঙ্গাইলের সবকটি নদীর পানি। তবে যমুনা নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও গতকাল যমুনার পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ধারাবাহিকভাবে জেলার অপর দুটি বৃহৎ নদী ধলেশ্বরী নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে ১৩২ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে এ জেলার পুংলী ও বংশাই নদী।

এছাড়াও বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার চার লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে ফসলি জমি, পাকা ও গ্রামীণ জনপথ। তবে এ জেলার বন্যামুক্ত রয়েছে সখীপুর, মধুপুর আর ধনবাড়ী উপজেলা।

Tangail-Flood-pic01.jpg

পানি কমার ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বাসাইল উপজেলা। বন্যাকবলিত আর পানিবন্দি এ জেলার ৫টি উপজেলা টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার আর বাসাইলের ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও জেলার ৯টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ প্লাবিত গ্রামের বন্যার্তদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকটসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তবে জেলার এই বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ এসেছে ৯০০ মেট্রিক টন চাল আর নগদ ১৮ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই বরাদ্দপ্রাপ্ত ওই চালের ৬৩৫ মেট্রিক টন ও নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা সম্পন্ন হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও মির্জাপুর। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে প্রায় ১ হাজার ৩৩০টি পরিবারের মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২১ হাজার ৯৭৪টি পরিবারের আংশিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভূঞাপুর উপজেলার ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজার ৪০০ মানুষ।

অপরদিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা মিলিয়ে অন্তত ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যার ফলে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ১৪৫ কিলোমিটার কাঁচা ও ১ কিলোমিটার পাকা সড়কসহ ৪টি ব্রিজ-কালভার্টের আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও যমুনায় পানি বৃদ্ধি আর স্রোতে ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাঁধের অজুনা ইউনিয়নের তারাই অংশে ১০০ ফুট ও ভূঞাপুর পৌরসভার অংশে ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। যা বর্তমানে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মেরামত করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছে ৩৯টি মেডিকেল টিম।

Tangail-Flood-pic01.jpg

এছাড়াও জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বন্যায় ৬ হাজার ৬৪৯ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২০ হেক্টর বোনা আমন জমি, ৩০৫ হেক্টর রোপা আমন (বীজতলা), ১৩৫ হেক্টর রোপা আমন (আবাদ), ১২৮৩ হেক্টর আউশ, ৬৩৯ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ২৬৭ হেক্টর জমির পাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, সোমবার সকালে যমুনা নদীর পানি কমলেও বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ব্রিজে বিপৎসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার, এবং ঝিনাই নদীর কালিহাতী উপজেলার যোকারচর এলাকায় বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাকি দুটি নদী পুংলী ও বংশাই নদী বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীগুলোর পানি আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরিফ উর রহমান টগর/আরএআর/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।