বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কাকে দেখেই নেপালে সরকার পতনের আন্দোলন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নেপালে বিক্ষোভের মুখে সরকারের পতন/ ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

নেপালে জেন জি আন্দোলন অবশেষে পতন হলো কে পি শর্মা অলির সরকারের। মাত্র দুদিনের বিক্ষোভেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু তার এই ক্ষমতাচ্যুতি আচমকা কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সরকার পতনের আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এমন কঠোর আন্দোলনে নেমেছিলেন নেপালের তরুণরা।

দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে সোমবারের (৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক তরুণ অংশ নেন, যাদের মধ্যে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের দাবি, এটি ছিল এক অভূতপূর্ব সমাবেশ, যেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ প্রভাব চোখে পড়েনি।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া আয়ুষ বাসায়াল নামের ২৭ বছর বয়সী এক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনে বিশাল জনসমাগম হলেও কিছু সংগঠিত লোক মোটরসাইকেল নিয়ে ভিড়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং তারা পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে যায়।

২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সুদী মহাতো জানান, দুপুরের পর পরিস্থিতি অস্থির হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়, অনেকে পাশের গলিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

দুর্নীতি ও হতাশা থেকে ক্ষোভের বিস্ফোরণ

কয়েক বছর ধরে দুর্নীতির নানা ঘটনা নেপালের পার্লামেন্ট ও জনসমাজে আলোচিত হলেও কার্যকর সমাধান হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১৭ সালের এয়ারবাস চুক্তি, যাতে নেপাল এয়ারলাইনস দুটি এ-৩৩০ উড়োজাহাজ কিনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন রুপি ক্ষতি করে। পাঁচ বছর তদন্ত শেষে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হলেও জনঅসন্তোষ দূর হয়নি।

অংশগ্রহণকারীদের মতে, কর প্রদান করলেও তার সঠিক ব্যবহার নেই—এমন অভিযোগ তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার আন্দোলন অনুপ্রেরণা

প্রতিবাদকারীরা বলছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক সরকার পতনের আন্দোলন থেকে নেপালের তরুণরা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশে তরুণদের নেতৃত্বে গণআন্দোলন সরকারকে পতন ঘটায়। একইসঙ্গে ফিলিপাইনে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নেপালের তরুণদের ক্ষোভ আরও উসকে দেয়।

এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেপালি রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি গভীর হয়। যেখানে দেশের মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৩০০ ডলার, সেখানে এ বৈষম্য তরুণদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধে ক্ষোভ দ্বিগুণ

গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপাল সরকার ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে আগেই ক্ষুব্ধ তরুণদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

পোখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক যোগ রাজ লামিছানে বলেন, এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে ন্যায়, জবাবদিহি ও ন্যায্যতার দাবি। তরুণরা দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত, আর সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তাদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আন্দোলনে সরকারের পতন

২০১৫ সালে যুব আন্দোলন হিসেবে যাত্রা শুরু করা সংগঠন ‘হামি নেপাল’ সোমবারের বিক্ষোভ আয়োজন করে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দপ্তরের অনুমতি নিয়েই তারা এ কর্মসূচি পালন করে।

তবে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে ভবনের প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ‍ওঠে। এসময় পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ১৯ জন নিহত হন, আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ। এতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।

সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।