একের পর এক লঞ্চ ভিড়ছে সদরঘাটে, মুখরিত নানান স্লোগানে
পৌষের হাড়কাঁপানো শীত। চারদিকে ঘন কুয়াশার চাদর। বুড়িগঙ্গার বুকে তখনও ভোরের আলো ঠিকমতো ফোটেনি। কিন্তু চিরচেনা রাজধানীর প্রধান নদী বন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আজ অন্যরকম এক চাঞ্চল্য। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৪টা। দক্ষিণবঙ্গের জেলা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি থেকে একে একে ঘাটে ভিড়তে শুরু করেছে বিশালকার সব লঞ্চ।
অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ডেক থেকে শুরু করে কেবিন, প্রতিটি তলায় তিল ধারণের জায়গা নেই। লঞ্চ থেকে নামা হাজার হাজার মানুষের চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ নেই, বরং আছে এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটার আনন্দ। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর তাদের টেনে এনেছে এই রাজধানীতে।
ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে সুন্দরবন, অ্যাডভেঞ্চার, কুয়াকাটা বা পারাবতের মতো বড় লঞ্চগুলো যখন সাইরেন বাজিয়ে ঘাটে ভিড়ছে, তখন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে টার্মিনাল এলাকা। কুয়াশার কারণে লঞ্চ চলাচলে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও মানুষের আবেগে কোনো ভাটা পড়েনি।
বরিশাল থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব রহমত উল্লাহ বলেন, ১৭ বছর ওনারে (তারেক রহমান) দেখি না। শীত কোনো ব্যাপার না বাবা, নেতাকে একনজর দেখমু, এই আশাতেই সারা রাত ডেকে বসে আসছি।
ঘাটে নামা যাত্রীদের অধিকাংশের গন্তব্য এখন বিমানবন্দর এলাকা। তবে নিরাপত্তার খাতিরে এবং ভিড় সামলাতে সদরঘাট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদেরও তৎপর দেখা গেছে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে গরম চা আর বিস্কুট হাতে নিয়ে অনেককে জটলা পাকিয়ে ফ্লাইট ট্র্যাকিং অ্যাপে নজর রাখছিলেন। সবার জিজ্ঞাসা, বিজি ২০২ ফ্লাইট এখন কোথায়?

সরেজমিনে দেখা যায়, লঞ্চ থেকে নেমেই যাত্রীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে রায়সাহেব বাজার এলাকার দিকে। সেখান থেকে বাস বা সিএনজিতে চড়ে তারা পৌঁছাতে চান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা আর তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার। সদরঘাটের এই জনস্রোত জানান দিচ্ছে, ১৭ বছর পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও বইছে উৎসবের আমেজ।
লঞ্চ থেকে নামা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকের কাছেই এটি কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এক আবেগঘন মুহূর্ত। বরিশাল থেকে আসা যুবদল কর্মী শামীম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গত রাতে লঞ্চে উঠেছি শুধু নেতাকে স্বাগত জানাতে। শীত বা কুয়াশা আমাদের আটকাতে পারবে না। আজ ১৭ বছরের আক্ষেপ মিটবে।
পটুয়াখালী থেকে আসা এক প্রবীণ কর্মী মাকসুদ আলী আবেগী কণ্ঠে বলেন, ভেবেছিলাম মরার আগে ওনারে আর দেখতে পাবো না। আল্লাহ ওনারে সুস্থভাবে দেশে ফিরায় আনছেন, এটাই আমাদের বড় পাওয়া। আমরা এখন সোজা বিমানবন্দর চলে যাবো।
ঘাট ও তৎসংলগ্ন কোতোয়ালি থানা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোর থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, লঞ্চে করে আজ বিপুল সংখ্যক যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করছেন। যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সদরঘাট ও আশপাশের মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে। আমরা ট্রাফিক বিভাগকেও অনুরোধ করেছি, যাতে লঞ্চ থেকে নামা মানুষের যাতায়াতে কোনো দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি না হয়।
এমডিএএ/কেএসআর/এএসএম