তারেক রহমানের ভাইরাল ছবিতে নজর কাড়লো যে বই
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের পাশে থাকা একটি বইয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বইপ্রেমীদের আলোচনায় এসেছেন স্বয়ং তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের পথে উড়াল দেওয়ার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পাশে দেখা গেছে একটি বিশেষ বই। বইটির নাম ‘In the Light of What We Know’। জিয়া হায়দার রহমানের কালজয়ী উপন্যাস এটি।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের আকাশে ডানা মেলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে দেশে রওনা দেন তিনি। বিমানটি বাংলাদেশের আকাশে আসামাত্র ছবিসহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আবেগঘন পোস্ট দেন তারেক রহমান। লেখেন, ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’
এই পোস্টে রাজনীতির বাইরের এক অন্য তারেক রহমানকে খুঁজে পেয়েছেন নেটিজেনরা। সেটি হলো তার রুচিশীল পাঠাভ্যাস। ছবিতে তার আসনের পাশেই দেখা গেছে বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘In the Light of What We Know’।
বইপ্রেমীরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে বই থাকা কেবল শখের বিষয় নয়, বরং এটি তাদের গভীর জীবনদর্শন ও চিন্তাশীলতার পরিচয় দেয়। কিছুদিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে কবি আহসান হাবীবের কবিতা যেমন পাঠকদের মনে প্রশান্তি এনেছিল, তারেক রহমানের এই বইটিও তেমনি এক ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। উগ্রতা ও সংস্কৃতির ধ্বংসযজ্ঞের বিপরীতে মেধা ও মননের এই চর্চা দেশের সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
জাইমা রহমানের ভাইরাল ছবিতে নজর কাড়ল আলোচিত যে বই
কী আছে এই বইটিতে?
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘In the Light of What We Know’ উপন্যাসটি সমসাময়িক বিশ্বসাহিত্যের এক অনন্য মাইলফলক। যা গল্পের সঙ্গে দর্শন, রাজনীতি, গণিত, অর্থায়ন এবং ইতিহাসের এক বিশাল ক্যানভাস।
উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং আফগানিস্তান যুদ্ধের পটভূমিতে। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন জাফর নামের এক গণিত প্রতিভা এবং তার এক ব্যাংকার বন্ধু। তাদের দীর্ঘ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে শেকড় সন্ধানের গল্প, অভিবাসীর সংকট, শ্রেণির লড়াই এবং বিশ্বরাজনীতির জটিল সমীকরণ।
বইটির একটি বড় অংশ জুড়ে আছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের সংকট ও সংগ্রামের গল্প। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর নিজ দেশে ফেরার মুহূর্তে এমন একটি বই সঙ্গে রাখা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বোদ্ধারা।
বইটির অর্জন ও কদর
জিয়া হায়দার রহমানের এই প্রথম উপন্যাসটিই তাকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি এনে দেয়। এটি ব্রিটেনের প্রাচীনতম সাহিত্য পুরস্কার ‘জেমস টেইট ব্ল্যাক মেমোরিয়াল প্রাইজ’ জয় করেছে। আন্তর্জাতিক সমালোচকরা একে ‘একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা উপন্যাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পাঠকদের জন্য বার্তা
যখন কোনো দেশের বড় মাপের নেতৃত্ব বই পড়েন, তখন তা কেবল নিজের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক নীরব দিকনির্দেশনা হয়ে দাঁড়ায়। তারেক রহমানের এই পাঠাভ্যাস প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল রাজনৈতিক ময়দান নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতেও নিজেকে সমৃদ্ধ রাখতে সচেষ্ট।
বইটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের অভিজাত বুকশপ যেমন বাতিঘর, পিবিএস বা রকমারিতে এটি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রায় এর দাম প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ডলারের মধ্যে, তবে স্থানীয় সংস্করণে এটি এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ই-বুক প্লাটফর্ম Kindle-তে এর ডিজিটাল কপি রয়েছে।
তবে দুপুর আড়াইটায় বইটি দেশীয় বাজারে বই বিক্রির বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘুরে স্টকে না থাকার তথ্য পাওয়া যায়।

এর আগে দেশের পথে বিমানে বসে থাকা অবস্থায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের একটি পারিবারিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ছবিটির একটি বিশেষ দিক নেটিজেনদের নজর কেড়েছে, তা হলো জাইমা রহমানের পাশে রাখা একটি বই।
লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার দীর্ঘ যাত্রায় জাইমা রহমানের সঙ্গী হয়েছে ‘The Penguin Book of Bengali Short Stories’ নামের বই। প্রখ্যাত ভারতীয় অনুবাদক অরুণাভ সিনহা সম্পাদিত ও অনূদিত এই সংকলনটি বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ‘পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউস’ থেকে প্রকাশিত।
বইটিতে কী আছে?
বইটি গত এক শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্পগুলোর একটি ইংরেজি সংকলন। এতে দুই বাংলার (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) দিকপাল লেখকদের কালজয়ী কাজগুলো স্থান পেয়েছে। এই সংকলনের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্যের সমাজবাস্তবতা, দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবিক সম্পর্কের গভীরতা ফুটে উঠেছে।
বইটিতে উল্লেখযোগ্য কিছু গল্পের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবিত ও মৃত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রেইনকোট (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক), শহীদুল জহিরের আগারগাঁও কলোনিতে নয়নতারা ফুল কেন নেই, হুমায়ূন আহমেদের খেলা, সত্যজিৎ রায়ের পিকুর ডায়েরিসহ সেলিনা হোসেনের মৃত্যুর নীলপদ্ম।
কেন আলোচনার কেন্দ্রে বইটি?
জাইমা রহমানের পাশের এই বইটি নিছক কোনো ভ্রমণসঙ্গী নয়, এটি তার সাংস্কৃতিক রুচি ও শেকড়ের সন্ধানের একটি নীরব বার্তা দিচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, বিদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা জাইমা রহমান পেশায় একজন ব্যারিস্টার। দীর্ঘ প্রবাস জীবনেও তিনি যে শিকড়ের প্রতি টান অনুভব করেন এবং বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী সৃষ্টিগুলোর খোঁজ রাখেন- এই বইটি তারই প্রমাণ হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। বিশেষ করে বইটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক জীবনবোধের গল্প থাকায় এটি তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
কীভাবে সংগ্রহ করবেন, দাম কত?
বইটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ সমাদৃত। যারা জাইমা রহমানের এই পছন্দের বইটি সংগ্রহ করতে চান, তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম Amazon, Book Depository বা পেঙ্গুইনের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করতে পারবেন। বাংলাদেশে রকমারি বা পিবিএস-এর মতো অনলাইন শপেও অনেক সময় প্রি-অর্ডার বা স্টকে পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে বইটির হার্ডকভার সংস্করণের দাম প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩,০০০-৪,০০০ টাকা)। তবে এর পেপারব্যাক সংস্করণ পাওয়া গেলে দাম কিছুটা কম হতে পারে (প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৮০০ টাকার মধ্যে)। ভারতে এর দাম প্রায় ৮০০ থেকে ১,২০০ রুপির আশপাশে।
আর যারা হার্ডকপি কিনতে চাইছেন না, তারা Kindle বা Google Books থেকে এর ডিজিটাল সংস্করণও সংগ্রহ করতে পারেন।
আপনি যদি বাংলা সাহিত্যের একশ বছরের বিবর্তনকে ইংরেজি ভাষায় সাবলীলভাবে বুঝতে চান, তবে এটি আপনার জন্য সেরা সংগ্রহ। অরুণাভ সিনহার অনুবাদ এতটাই প্রাণবন্ত যে, মূল বাংলার রস আস্বাদনে কোনো ঘাটতি হয় না। প্রবাসীদের নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলা সাহিত্যকে চেনার এটি একটি চমৎকার জানালা।
এমডিএএ/এমএমএআর/এমএস