‘মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি’

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪১ পিএম, ০২ মার্চ ২০২২
পোল্যান্ড আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বাংলাদেশের আরিফ চৌধুরী

নানা ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেন পেরিয়ে বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা পোল্যান্ড সীমান্তে প্রবেশ করছেন। দেশটিতে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

পোল্যান্ডে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শহর শেমিসেলের রেলস্টেশনে তিল ধারণের জায়গা নেই। তীব্র ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে আসা অভিবাসীরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনীয় নাগরিক ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের একজন আরিফ চৌধুরী।

দুইদিন আগেই আরিফ চৌধুরী কিয়েভ থেকে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় ১৩ জন বাংলাদেশিসহ তিনি পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে পৌঁছান। রেলস্টেশনটিতে তিনি ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে বলেন, আমার সঙ্গে ১৩ জন প্রবেশ করেছেন। তাদের ছয়জন নারী, দুইজন শিশু। বাকিরা শিক্ষার্থী ছিল তারা পার হতে পারেনি। ওদের জন্য আমি অপেক্ষা করছি।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ যাত্রা ছিল। আমার নতুন জন্ম হয়েছে। মৃত্যু যে কত কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যু যে কত প্রকার হতে পারে, সেটা এই পরিস্থিতিতে না গেলে বলে বোঝানো সম্ভব না। আমরা ঠিক এমন পরিস্থিতি দেখে আসছি। ঘুমিয়ে গেছি এর মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি৷ রাশিয়া বাড়ি ঘরে হামলা শুরু করেছে। বাসা বাড়িতে ঢুকে গুলি করছে। যার জন্যই সেখান থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।

আরিফ জানান, পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছ থেকে তারা সহায়তা পাচ্ছেন। ইউক্রেনে বাংলাদেশের কনস্যুলারও তাদের সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ইউক্রেন সীমান্তে নানা সংকট হলেও পোল্যান্ডে ঢুকতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।

দেশটি সীমান্ত অঞ্চল থেকে বিনা টিকিটে অভিবাসীদের গণপরিবহনে যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও নানাভাবে অভিবাসীদের সহায়তা দিচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় অনেকে অভিবাসীদের তাদের থাকার জায়গাও দিচ্ছেন।

jagonews24পোল্যান্ডের সীান্তবর্তী শেমিলেস রেলস্টেশনে ইউক্রেন থেকে আগত অভিবাসীরা। ছবি: আরাফাতুল ইসলাম

রেল স্টেশনটিতে অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, আমি কিয়েভে থাকতাম। কিয়েভের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। আমরা জীবনের নিরাপত্তার জন্য দূতাবাসের জন্য যোগাযোগ করি। আমার পাসপোর্টসহ সব ডকুমেন্টসই আছে। তখন ওরা (পোল্যান্ড) আমাদের ১৫ দিনের ট্রাভেলিং ভিসা দিয়ে দিয়েছে।

এদিকে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ঢলের কারণে দেশটির বিভিন্ন সীমান্তে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হেঁটে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। মেডিকা সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে আসা বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেনও এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ অভিবাসীর সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় সীমান্ত অতিক্রম করেন।

সেখানে আরেক বাংলাদেশি শেখ নাসের উদ্দিন ডয়চে ভেলের কাছে তার যাত্রার ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়দের আলাদা লাইনে ইমিগ্রেশনে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের ডকুমেন্টও পরীক্ষা করা হয় না। আমরা যারা বিদেশি আছি তাদের আলাদাভাবে ডকুমেন্ট পরীক্ষা করা হয়। সীমান্তে খুবই ভোগান্তি। আমি ছয় দিন ছয় রাত থেকে..খাওয়া দাওয়া ঘুম নাই, ঠান্ডার মধ্যে থেকে এসেছি। এই ছয়দিন রাস্তাতেই ছিলাম লাবিব সীমান্তের অংশটুকুতে। উন্মুক্ত জায়গায় ছিলাম।

শুধু বাংলাদেশি নন এমন দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন মেডিকায় পৌঁছানো ভারতীয় শিক্ষার্থী শীতল। তিনি বলেন, সীমান্ত অতিক্রমে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। ভারি ব্যাগ নিয়ে আসাটা ছিল খুবই কষ্টকর। আমি হাঁটতেও পারছিলাম না ঠিকমতো।

সীমান্তে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে কয়েকজন ভারতীয় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শীতল সেখানে ছিলেন বলে জানান। তিনি দাবি করেন, অভিবাসীরা অধৈর্য্য হয়ে ওঠার কারণে এক পর্যায়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন অবস্থায় নিরাপত্তকর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে রোববার পোল্যান্ডে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন ডয়চে ভেলেকে সেদিন স্থানীয় সময় বিকেল পর্যন্ত চারশ বাংলাদেশি পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। গত দুইদিনে যা আরও বেড়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে ঠিক কতজন বাংলাদেশি বাস করেন তার সঠিক হিসেব জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো হতে পারে।

এমআরএম/জিকেএস

টাইমলাইন  

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]