মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
ছেলের পছন্দের খাবার রান্না করেছিলেন মা, খাওয়ানো হলো না
ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল তানবীর আহমেদ (১৪)। প্রতিদিনের মতো সোমবারও বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলে যায় তানবীর। বাসায় ফিরে সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাবেন। এজন্য তানবীরের পছন্দের খাবার রান্না করেছিলেন মা লিপি বেগম।
কিন্তু সেই খাবার খাওয়ার আনন্দ কিছুক্ষণ পরে রূপ নিলো বিষাদে। দুপুর ১টার দিকে খবর আসে স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে তানবীর আহমেদের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত তানবীর আহমেদের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের রুবেল মিয়া ছেলে।
তানবীরের পড়াশোনার সুবাদে পরিবারের সবাই উত্তরায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফও একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাশরীফের স্কুল ছুটি হওয়ায় বাবার সঙ্গে বের হয়ে এলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ও বাবা। স্বজনরা ছাড়াও আশপাশের লোকজন তানবীরকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন।
তানবীরের মা লিপি বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলের পছন্দের জন্য মাংস ও মাছ রান্না করেছিলাম। আর আমাদের জন্য মাছের তরকারি করেছিলাম। স্কুল থেকে বিকেল ৩টার দিকে এসে আমাদের সঙ্গে খাওয়ার কথা ছিল। সেই খাবার ওইভাবেই রয়ে গেলো’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তানবীরের ছোট ভাই তাশরীফ জাগো নিউজকে বলে, ‘বাবা ভাই ও আমাকে একসঙ্গে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল। স্কুল শেষে আমি বাবার সঙ্গে ব্যাংকে গিয়েছিলাম। ব্যাংকে জানতে পারি স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে আমরা স্কুলে আসি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলাকার সবাই তানবীরকে খুব ভালোবাসতো। বাড়িতে এলে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতো। তার মতো এমন মেধাবী আমাদের গ্রামে খুবই কম আছে।’
আলমগীর হোসেন নামের আরেকজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তানবীরকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। লেখাপড়ায় সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করতো। তার স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবে। তার অকাল মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক।’
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমরা সবাই মর্মাহত। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানবীরের পরিবারের পাশে থাকবো।’
পরিবার সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টায় উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয় মাদরাসায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তানবীরকে দাফন করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এসআর/এমএস