‘টিফিন দিতে পারিনি বলেই হয়তো বেঁচে গেছে আমার ছেলেটা’
ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মোহাইমিন আরিয়ানের মা আশফিয়া মুমতাজ শিল্পী। স্কুলটিতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরদিন সকালে মাঠে দাঁড়িয়ে ভবনটির ক্ষতচিহ্ন দেখছিলেন।
ওই ভবন থেকেই কীভাবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছে তার ছেলে, সে বিষয়ে কথা বলছিলেন তিনি।
আশফিয়া মুমতাজ শিল্পী জানান, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় ছেলেকে ব্যাগে টিফিন পাঠান তিনি। তবে সোমবার ছেলেকে টিফিন দিয়ে দিতে পারেননি, তাই তার কাছে টিফিনের জন্য টাকা দিয়েছিলেন।
তিনি বলছিলেন, আমি ছেলেকে বললাম আজকে তোমাকে টিফিন দিলাম না, টাকা নিয়ে যাও, স্কুলে গিয়ে কিছু কিনে খাইয়ো। পরে ও যখন নিচে নামতেছে তখন ওর স্যার ওরে নিচে নামতে নিষেধ করেছিল। তখন ও বলছে আমার কোচিং আছে কিছু না খেলে তিনটা পর্যন্ত থাকতে পারবো না।
‘পরে স্যারকে গিয়ে অনেক জোরাজুরি করার পর ও যখন নিচে নেমে আসছে। সাথে সাথে ওর স্যার এবং আরেক বন্ধুও নিচে নেমে আসছে। নিচে নেমে আসার একটু সামনে আগাতেই বিকট শব্দ’।
ভবনের সামনেই একটি গাছ দেখিয়ে শিল্পী বলছিলেন, ‘ওই যে দেখেন না গাছটা, ওই গাছটার কাছে যখন তখন আমার আরিয়ান দেখে আগুন আর আগুন। চারদিকে ধোঁয়া ও দৌড়ে স্কুলের বাইরে বের হয়ে যায়’।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলছিলেন, আমি টিফিন দিতে পারিনি বলেই হয়তো বেঁচে গেছে আমার ছেলেটা। কিন্তু ওর কাছের বন্ধুরা মারা গেছে’।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে মাইলস্টোন স্কুলের সেই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি থেকে কড়াকড়ি সরিয়ে নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে সকাল থেকেই স্কুলটি থেকে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া পাহারা সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের স্বজন, গণমাধ্যমসহ অনেকেই সেখানে আসতে শুরু করে।
গত সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার দুপুর ২টার পর জানায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা ৩১ জনের মৃত্যু ও ১৬৫ জন আহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে জাতীয় বার্ন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নাফি নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়।
এমআরএম/এএসএম