মাইলস্টোনে এমন নিস্তব্ধ সকাল কখনোই ছিল না

ইব্রাহীম হুসাইন অভি
ইব্রাহীম হুসাইন অভি ইব্রাহীম হুসাইন অভি
প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ২২ জুলাই ২০২৫
উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটে আজ নেই শিক্ষার্থীদের কোলাহল। ছবি: জাগো নিউজ

সকালবেলা। এই সময়ে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গেটে থাকতো প্রাণচাঞ্চল্য, মুখর হতো ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায়। বাবা-মায়ের হাতে হাত রেখে স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে প্রিয় শিক্ষালয়ে প্রবেশ করতো কোমলমতি শিশুরা। কারও মুখে টিফিনের গল্প, কেউ বা হোমওয়ার্ক শেষ না হওয়ার চিন্তায় মগ্ন। অথচ আজ—সেই গেটেই নেমে এসেছে এক ভয়ানক নিস্তব্ধতা, নেই কোলাহল। গেট জুড়ে উৎসুক মানুষের ভিড় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে সশরীরে গিয়ে দেখা যায়, মাইলস্টোন স্কুলের গেট যেন এক শ্মশানে রূপ নিয়েছে। নেই সেই চিরচেনা মুখ, নেই মায়ের আদুরে সন্তানের হাতে টিফিনবক্স ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য। বিদ্যালয়ের গেটের সামনে জমেছে শোকাহত মানুষের ভিড়। চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। কারণ একটাই—স্কুল ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অকালে ঝরে গেছে একাধিক প্রাণ। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে শতাধিক ফুলের কলি, যাদের আজ স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল।

মাইলস্টোনে এমন নিস্তব্ধ সকাল কখনোই ছিল না

হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই এবং মা-বাবার কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে আশপাশ।

যে স্কুল প্রাঙ্গণে প্রতিদিন বেজে উঠত শিশুকণ্ঠের কলরব, সেখানে আজ শুধুই কান্নার আওয়াজ। উৎসবমুখর যে প্রাঙ্গণ, আজ সেখানে শুধুই নিস্তব্ধতা।

বিদ্যালয়টির আশপাশের দোকানপাট, যেখানে প্রতিদিন ব্যস্ততা লেগে থাকতো, আজ সেগুলোও বন্ধ অথবা প্রায় ফাঁকা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এমন নীরবতা তারা এই এলাকায় কখনো দেখেননি।

এমনই একজন নিজাম উদ্দিন বলছিলেন, ‘আজ যে শিশুর স্কুলে আসার কথা ছিল, সে আসতে পারিনি। দুর্ভাগ্য সে আজকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে, কেউ হয়তো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। যার কথা ছিল মায়ের হাত ধরে স্কুলে ফিরবে টিফিন খাবে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে কিন্তু সে আজ হাসপাতালের বিছানায়। এরকম একটা দিন দেখতে হবে আমরা কখনো ভাবিনি। এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছি কিন্তু এরকম সকাল এই প্রথম দেখলাম।’

নিজাম উদ্দিন বললেন, প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ, আবার কেউ আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। যাদের স্বপ্ন ছিল, সামনের পরীক্ষায় ভালো করবে, নতুন ক্লাসে উঠবে—সব থেমে গেল একটি মুহূর্তে।

মাইলস্টোনে এমন নিস্তব্ধ সকাল কখনোই ছিল না

এই শোক সারা জাতির। একটি দুর্ঘটনা যে কতগুলো পরিবারকে চিরতরে নিঃস্ব করে দিতে পারে, তারই নির্মম বাস্তবতা আজকের সকাল।

‘সেই সকালবেলার চিরচেনা দৃশ্য হয়তো আবার ফিরবে, কিন্তু যে মুখগুলো আর ফিরবে না, তাদের শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়’, বলছিলেন নাজিম।

উজ্জ্বল নামের এক ব্যক্তি এসেছিলেন তার সহকর্মীর মেয়ের খোঁজে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো মেয়েটি, কিন্তু এখনো তার কোনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি।

আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের খবর পাচ্ছি না। কাকে জিজ্ঞেস করবো বা আদৌ তার খোঁজ পাওয়া যাবে কিনা।’ তিনি ও মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা হন্ন হয়ে খোঁজ করছেন।

আইএইচও/এমএমএআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।