‘বিমানের শব্দ শুনলেই কলিজা কাঁপছে, দিয়াবাড়ি শাখায় আর পড়বো না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৫
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাহিদ সাবির/ছবি: জাগো নিউজ

‘ঘটনার পরপর দুইবার স্কুলে এসেছি। এখানে এলেই বিমানের বিকট শব্দ কানে আসছে আর কলিজাটা কেঁপে উঠছে। বিমানের শব্দ শুনলেই মনে হচ্ছে মাথায় এসে পড়বে, মনে হচ্ছে পালাই। মাইলস্টোনে পড়লেও এ ক্যাম্পাসে (দিয়াবাড়ি শাখা) আর থাকবো না। অন্য জায়গায় ট্রান্সফার নিতে চাই।’

ভয়-আতঙ্কের মাত্রা বোঝাতে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানাচ্ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাহিদ সাবির। গত ২১ জুলাই দুপুরে যখন হায়দার আলী একাডেমিক ভবনে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, তখন সে ওই ভবনেই ছিল।

jagonews24

রোববার (২৭ জুলাই) সাবির বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলে এসেছে তার ব্যাগ নিতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অক্ষত থাকা ব্যাগগুলোতে শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় লিখে একটি কক্ষে রেখেছে। সেখান থেকে সবাই নিজের ব্যাগ সংগ্রহ করছে। সাবিরও তার ব্যাগ খুঁজে কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে আসে।

ক্যাম্পাসের কাউন্সেলিং সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় সাহিদ সাবির, তার বড় ভাই মাইলস্টোনের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজিদ সাহিক ও বাবা হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম সোহেলের সঙ্গে।

সাহিদ সাবির বলে, ‘স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। আমার ক্লাসরুম হায়দার আলী ভবনে ঢুকে বামদিকে। স্কুল ছুটির পর কোচিং ক্লাস ছিল ডানদিকে (যেখানে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে)। সেখানে এসে ব্যাগ রেখে আবার বাম পাশের কোনার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখনই বিমান এসে পড়ে।’

‘প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি, ভাবছিলাম ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়েছে। পরে দেখি না আগুন বেশি...অন্য কিছু। আমরা বেঞ্চের নিচে লুকিয়ে পড়ি। কিন্তু এত ধোঁয়া যে তাকানো যাচ্ছিল না, দম নেওয়া যাচ্ছিল না। আমরা তখন জানালার দিকে গিয়ে দাঁড়াই। সেখান থেকে আমাদের কিছু বড় ভাইয়ে আমাদের দেখে ওখানেই দাঁড়াতে বলে। পরে তারাই গ্রিল ভেঙে বামদিক দিয়ে আমাদের বের করে ৬ নম্বর ভবনে নিয়ে যান।’

jagonews24

সাবিরের বাবা রবিউর ইসলাম সোহেল বলেন, ‘গত ২৮ জুনে ওদের মা মারা গেছে। আমার বড় ছেলেটাও মাইলস্টোনে দশম শ্রেণিতে পড়ে। দুই ছেলেই স্কুলে ছিল। সাবিরের ভবনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। অফিসের একটি কনফারেন্সে আমি কক্সবাজার ছিলাম। ওদের স্কুলে স্কলারশিপ গ্রুপে ওইদিন দুপুরে কল আসে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও কল আসে। ব্যস্ততার কারণে আমি গ্রুপ কলে অ্যাটেন্ড করিনি।’

‘পরক্ষণে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। রিসিভ করতেই শুনি সাবিরের কণ্ঠ…বাবা, আমি সাবির। আমাদের স্কুলে বিমান ব্লাস্ট হয়েছে। আমার মাথার চুল, জুতা পুড়ে গেছে। আমি ৬ নম্বর বিল্ডিংয়ে লাইব্রেরিতে আছি। তুমি কোথায় আছো, এখনই এসো...।’

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ছেলের এমন আকুতি শুনে আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। কারণ কদিন আগেই ওদের মা মারা গেছে। স্কুলে এসে ও খুব কাঁদে। তখন মাহেরীন ম্যাডাম ওকে দেখে রাখতেন, কান্না থামাতেন। অন্য ম্যাডামরাও ওকে অনেক আদর করেন, দেখে রাখেন।’

jagonews24

ছেলে সাবির ভয়-আতঙ্কে মাইলস্টোনের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে আর পড়তে চায় না। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করা হলে বাবা রবিউল বলেন, ‘ছেলে যেহেতু চায় না, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখবো। যদি সম্ভব হয় অন্য শাখায় নেওয়ার চেষ্টা করবো।’

গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে সরকর। দগ্ধদের অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বার্নে ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সিবিআর ক্যাটাগরিতে ৯ জন। বাকিরা অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি।

এএএইচ/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।