বোনের পাশে শায়িত হলো ছোট্ট নাফি, শোকে স্তব্ধ মা-বাবা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৭ এএম, ২৪ জুলাই ২০২৫
নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম ও তার ছোটভাই আরিয়ান আশরাফ নাফি/ ছবি- সংগৃহীত

১৩ বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আশরাফুল ইসলাম ও তাহমিনা দম্পতির কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম। নিঝুমের জন্মের চার বছর পর কোলজুড়ে আসে ছেলে আরিয়ান আশরাফ নাফি (৯)।

কিন্তু গত সোমবার (২১ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে আহত হওয়ার পর নাজিয়া ও তার ভাই নাফিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেদিনই রাত ৩টার দিকে মারা যায় নাজিয়া। আর মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকে তার ছোট ভাই নাফি। বোনের একদিন পর মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার দিকে নাফিও পাড়ি জমায় না ফেরার দেশে।

নাজিয়াকে দাফনের মাত্র একদিন পরেই তাদের বাবা-মা নাফিকে দাফন করেন। নাজিয়ার ছোট ভাইকে তার পাশেই দাফন করা হয়। বুধবার এ দাফন সম্পন্ন হয়। রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়ার এক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। দুই সন্তানের মৃত্যুতে নিঃসন্তান হয়ে গেলেন নীরব-তাহমিনা দম্পতি।

যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দিনরাত সময় কেটেছে বাবা-মায়ের, আজ তারা নিঃস্ব। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ। যেন কেউ নেই তাদের সঙ্গে। শোকে পাথর পুরো পরিবার। সোমবার থেকে অনবরত চোখের পানি ঝরছে বাবা-মায়ের।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘উত্তরা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। আর নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেম বার্ন ছিল।’

নাজিয়া-নাফির বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে-মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। ভর্তি করেছিলেন বাসার কাছাকাছি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। নাজিয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর নাফি পড়তো ইংলিশ ভার্সনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

নাজিয়া-নাফির দাদা বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ জয়নগর গ্রামেও চলছে শোকের মাতম। নাফির চাচা মো. হাসান বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় আমার ভাই-ভাবি নিঃসন্তান হয়ে গেলেন। নাজিয়া ও নাফি দুজনই অনেক মেধাবী ছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাজিয়াকে উত্তরার কামারপাড়ার এক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তার ছোট ভাই নাফি। পরবর্তীতে বুধবার দুপুরে নাফিকে তার বোনের পাশে একই কবরস্থানে দাফন করা হয়ে। একই সঙ্গে দুই সন্তান হারিয়ে আমাদের পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

গত সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে বিধ্বস্ত হয়। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৯ জন।

টিটি/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।