হাদি হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কফিন মিছিল, বিক্ষোভ-ব্লকেড
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের নেতা শহীদ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে কফিন মিছিলের আয়োজন করে জুলাই ঐক্য চট্টগ্রাম। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগানে মুখর ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লা মসজিদ থেকে মিছিলটি জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে শুরু হয়ে জামালখান সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের ব্যানারে মিছিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একযোগে কর্মসূচি পালন করা হয়। মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, কফিন মিছিল ও ব্লকেডের মতো কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নেতাকর্মী এবং পেশাজীবীরা অংশ নেন।
জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের সংগঠক আবরার হাসান রিয়াদ সমাবেশ থেকে দাবি করেন, ওসমান হাদির মূল হত্যাকারীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। ভারতে পালিয়ে থাকলে ভারত সরকারকে বাধ্য করতে হবে আসামিকে ফিরিয়ে দিতে। অন্যথায়, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করতে হবে।

ভারত সরকার জুলাইযোদ্ধাদের চরমপন্থি গোষ্ঠী সম্বোধন করার প্রতিবাদে বলেন, দ্রুত ভারতকে ক্ষমা চেয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। হাদি হত্যার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা হাদি হত্যায় জড়িতদের ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। দাবি আদায় না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
একই সময়ে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ এলাকা থেকে ছাত্র-জনতার একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ শাখা। একই স্থান থেকে খেলাফত মজলিশের নেতাকর্মীরাও আলাদা একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকেলে নগরীর বন্দর এলাকার স্লটগোলা মোড়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন।
শিবিরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র-জনতার মিছিলটি লালখান বাজার ও টাইগারপাস হয়ে দেওয়ানহাটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, ঘটনার পরপরই ভিডিও ও অভিযুক্তদের পরিচয় প্রকাশ পেলেও এক সপ্তাহে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

তারা অভিযোগ করেন, হত্যাকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মধ্যরাত পর্যন্ত খুলশীতে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে ওই এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। দেশে চিকিৎসার পর গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে খবর আসে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
এমআরএএইচ/এমআরএম/এএসএম