জামায়াত আমির
শহীদ ওসমান হাদির রক্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ করুক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে এবং বিভাজনের সুযোগ নিয়েই আধিপত্যবাদ মাথাচাড়া দেয়। আজ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে ওসমান হাদীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। শহীদ ওসমান হাদির রক্ত আমাদের ঐক্যবদ্ধ করুক। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। তিনি আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে হেফাজত করুন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া দেশের বাইরে থেকেও প্রতিটি মুহূর্ত তিনি দেশের খবরাখবর রাখছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলেও জানান।
পোস্টে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শাহাদাতে গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, স্নেহের শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জন্য মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। তিনি মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।
তিনি আরও বলেন, শহীদ ওসমান হাদি একটি আধিপত্যমুক্ত, স্বাধীন ও ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং শাহাদাত পর্যন্ত সেই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সহিংসতার পথে নয়, বরং যুক্তি ও আদর্শের মাধ্যমে ইনসাফের লড়াইয়ে বিশ্বাসী ছিলেন।
জামায়াত আমির দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির রক্ত বিফলে যাবে না এবং তার স্বপ্নের ‘ইনসাফের বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ লড়াই অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে এবং এ বিচার করতেই হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে ধৈর্য ও অবিচলতার সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারী কেউ যেন স্যাবোটাজের মাধ্যমে আন্দোলনকে কলুষিত করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
পোস্টে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে দেশবাসী যখন সোচ্চার, সেই মুহূর্তে দেশে বেশ কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ প্রেক্ষিতে তিনি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন।
প্রথমত, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং প্রবীণ সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। তার ভাষায়, স্বাধীন গণমাধ্যম রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা সবাইকে মিলেই নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের আমলে যেভাবে গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হামলা করা হতো, সেই সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে চান না বলেও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং যেকোনো ধরনের ঘৃণামূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে।
দ্বিতীয়ত, হাইকমিশন কার্যালয়সহ কয়েকটি কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তৃতীয়ত, ধর্ম অবমাননাকে চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ এ অন্যায় করলে আদালতের মাধ্যমে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে আইন হাতে তুলে নিয়ে ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, বিচার নিজ হাতে তুলে নেওয়া ইসলামের শিক্ষা নয়।
জামায়াত আমির বলেন, এ দেশের মূলধারার সকল ইসলামপন্থি দল ও সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী এবং কোনো অবস্থাতেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে নয়। পরিকল্পিত উপায়ে স্যাবোটাজ করার জন্যই কোনো পক্ষ এ কাজ করে থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। ঘটনা ঘটার পূর্বে কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং ঘটনার দীর্ঘ সময় পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এগিয়ে না আসা প্রমাণ করে, প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা এই স্যাবোটাজ পরিকল্পনার অংশ হয়ে থাকতে পারে। এ কারণে দেশবাসীকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে দ্রুত সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক করে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।
বিভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে দেশের সুরক্ষায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
আরএএস/এসএইচএস/এএসএম