খালেদা জিয়ার পথচলা: সংসদ থেকে কারাগার, অসুস্থতা থেকে মুক্তি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৫ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
চার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটিতে অংশ নিয়ে বিজয় লাভ করেন খালেদা জিয়া/ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের নাম বেগম খালেদা জিয়া। দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব পরবর্তী জীবন কেটেছে বিরোধী দলের নেতৃত্ব, গ্রেফতার ও কারাবাস, দুর্নীতি মামলা, বিদেশ সফর এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার মধ্য দিয়ে।

গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালে ৩৭ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হার মেনেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে মারা যান তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আপসহীন নেত্রী বিদায় জানালেন দেশবাসীকে।

সংসদে শক্তিশালী বিরোধী নেতৃত্ব

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ১১৬টি আসনে জয় পেলেও সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ ১৪৭টি আসনে বিজয়ী হয়ে জাতীয় পার্টির সমর্থনে সরকার গঠন করে। ওই সংসদে বিএনপি দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কাছে পরাজিত হয় বিএনপি। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ সংসদেও খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

গ্রেফতার ও কারাবাস

২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে ছেলেসহ খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এক বছর সাত দিন কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি মুক্তি পান। তদন্তকালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২৪ সালে এ মামলায় তিনি খালাস পান।

সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ নিয়ে বিতর্ক

২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর সেনানিবাসে অবস্থিত তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছাড়েন খালেদা জিয়া। তিনি দাবি করেন, তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তৎকালীন সরকার জানায়, তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ওই বাসভবনটি তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

কূটনৈতিক তৎপরতা ও বিদেশ সফর

২০১২ সালে খালেদা জিয়া সৌদি আরব, চীন ও ভারত সফর করেন। সৌদি আরবে ওমরাহ পালন ও যুবরাজ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে সাক্ষাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা হয়।

চীন সফরে তিনি দেশটির তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় পদ্মা সেতুসহ বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতি উঠে আসে।

একই মাসে ভারত সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।

অসুস্থতা ও চিকিৎসা

দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়া কিডনি ও যকৃতের জটিলতা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ নানা রোগে ভুগেছেন। ২০২১ সালে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২০২২ সালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি লন্ডনে যান। পরে ২৩ নভেম্বর ২০২৫ তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মুক্তি ও ভিভিআইপি মর্যাদা

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়া মুক্তি পান। একই মাসে দীর্ঘদিন জব্দ থাকা তার ব্যাংক হিসাব অবমুক্ত করার নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

২০২৫ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার তাকে ভিভিআইপি ঘোষণা করে এবং তার নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করে।

এমএএস/এএমএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।