খালেদা জিয়ার মরদেহ জানাজাস্থলে নেওয়ার সময় শ্রদ্ধা জানানো যাবে
আলাদা করে সুযোগ রাখা না হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে সংসদ ভবনের জানাজাস্থলে নেওয়ার সময় জনসাধারণ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। একই সঙ্গে তার দাফনের সময় নির্ধারিত ব্যক্তিরাই কেবল উপস্থিত থাকতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় নিয়ে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির প্রতিনিধিদল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার (খালেদা জিয়া) জানাজা হবে। মরদেহ সকালেই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে নিয়ে আসা হবে। আসার সময় পুরো রাস্তার দুই পাশেই একটা স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যারেঞ্জমেন্ট এনসিওর করা হবে। আমরা অ্যাট দ্য সেইম টাইম জানিয়ে দেব- কখন এই মরদেহবাহী গাড়ি রওনা দেবে। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় অনারে তাকে নিয়ে আসা হবে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে জানাজা হবে।
সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা রাখা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, না, আমরা আশা করছি জানাজায় তো সারাদেশ থেকে সবাই আসবেন। আরেকটা হচ্ছে যে তার দাফনে অবশ্যই যথেষ্ট সিলেক্টেড পিপল থাকবেন। কেননা এই পুরো জায়গাটুকু খুব কনজেস্টেড স্পেস, সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। সেই জায়গাটা সিলেক্টেড পিপল থাকবেন। কারা থাকবেন সেটা পার্টি ডিসিশন দেবে। পার্টি জানিয়ে দেবে যে কারা কারা থাকবেন।
সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলাম বলেন, এভারকেয়ার থেকে জানাজায় আসার পুরো জায়গাটায়ই আমাদের নেতাকর্মী ও জনসাধারণের জন্য শ্রদ্ধার জায়গা হিসেবে আমরা ট্রিট করব। কারণ আপনারা নিজেরাও বোঝেন। এটা তো কল্পনাও করা যাবে না আগামীকাল কি পরিমাণ লোক রাস্তায় দেখবেন। হ্যাঁ, তিনি তো আর কোনো দলের নেত্রী নন। তিনি বাংলার মানুষের নেত্রী। তার জানাজায় আপনাদের হয়তো কোনো হিসাবে মিলবে না। সো, এখানে আমরা যদি কোনো স্ট্রাকচারাল ওয়েতে যাই, ইন্ডিভিজুয়ালি যেটা অন্য জায়গায় হয়, তখন এটা হয়তো ম্যানেজমেন্টের বাইরে চলে যাবে এবং সময়েও সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, সেজন্য আমরা অনুরোধ করেছি আমাদের নেতাকর্মী এবং সবাইকে আমরা অনুরোধ করেছি এভারকেয়ার থেকে যখন আমাদের নেত্রীকে আনা হবে জানাজার জায়গায়, পথিমধ্যে তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য।
খালেদা জিয়ার মরদেহ গুলশানে তার দলীয় কার্যালয়ে নেওয়া হবে কি না- এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, এটা পার্টি (বিএনপি) বলতে পারবে।
তখন শামছুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা করিনি।
বেগম জিয়ার মৃত্যুতে সংসদে শোক বই খোলা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোতে শোকবই খোলা হবে এবং বিএনপির পার্টি অফিসে শোকবই খোলা হবে।
খালেদা জিয়ার মরদেহ হাসপাতাল থেকে জানাজাস্থলে নেওয়া এবং জানাজা বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন; আইন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন; সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী; স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ এবং তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আরএমএম/এমআইএইচএস/এএসএম