খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফন
‘বিশেষ নিরাপত্তা’ জোরদার, থাকছে পুলিশ-এপিবিএন-র্যাব-বিজিবি-সেনা
সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ দুপুর ২টার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে মানুষ সমবেত হবে। জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করছে দলটি। জানাজা এবং দাফন সবকিছু পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তার জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের একজন প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত ঢাকায় আসছেন।
জানাজা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। সার্বিক নিরাপত্তার ১০ হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে শুরু করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে মরদেহবাহী গাড়ি ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। এরই মধ্যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জিয়া উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় মঙ্গলবার রাত থেকেই পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জানাজা থেকে শুরু করে দাফনকাজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলয় থাকবে মিয়া অ্যাভিনিউসহ পুরো রাজধানীজুড়ে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত।
এদিকে, এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে শুরু মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও বেশকিছু সড়কে গাড়ি চলাচল ও পার্কিংয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এছাড়া কিছু সড়ক বন্ধ থাকবে।
সারাদেশ থেকে জানাজায় অংশ নিতে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসছেন। সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে জানাজায় অংশ নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জানাজায় অংশ নিতে আসাদের কোনো ব্যাগ বা ভারী সামগ্রী বহন না করতে বলেছে সরকার। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার থেকে নামাজে জানাজা সরাসরি সম্প্রচার করবে।
ডিএমপি বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় নেতাকে সর্বস্তরের জনগণ যেন নির্বিঘ্নে সম্মান জানাতে পারেন এবং তার জানাজায় অংশ নিতে পারেন সেজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সব দপ্তর। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি জানিয়েছে, সরকারি উদ্যোগে বুধবার খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা হবে দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। জানাজার নামাজ পড়াবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ও আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় নিয়ে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ ও সিকিউরিটি এজেন্সির তরফ থেকে প্রত্যেকটা বিষয়ে আবার নতুন করে রিভিউ করা হয়। আপনারা জানেন কিছুদিন আগে একটি বড় জানাজা হয়েছে। ফলে পুলিশের এবং সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর নিজেদের মধ্যেই কিছু প্রস্তুতি অলরেডি ছিল, এখন আরও বড় আকারে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
সার্বিক কার্যক্রম ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, না, এজন্যই সর্বোচ্চ সিকিউরিটি এনশিওর (নিশ্চিত) করা হবে। ডিএমপির তরফ থেকে বলা হয়েছে, ১০ হাজারেরও বেশি পুলিশ, এপিবিএন এবং অন্যান্য যারা সিকিউরিটি এজেন্সির অফিসার আছেন, তারা থাকবেন। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীরও তরফ থেকে একটা ব্যবস্থাপনায় থাকবে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান জাগো নিউজকে বলেন, জানাজাস্থল ও আশপাশে রাত থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। জিয়া উদ্যান সড়কে জনসাধারণের প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সকাল থেকে দাফন পর্যন্ত জানাজা ও দাফনকাজের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মরদেহ যেভাবে আসবে সংসদ ভবনে
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার মরদেহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নেওয়ার জন্য নির্ধারিত রুট ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঘোষিত রুট অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার অতিক্রম করে নৌ সদর দপ্তরের পাশ দিয়ে গুলশান-২ এলাকার বাসভবন ফিরোজায় নেওয়া হবে। সেখান থেকে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ ধরে এয়ারপোর্ট রোডে উঠে মহাখালী ফ্লাইওভার পার হয়ে জাহাঙ্গীরগেট ও বিজয় সরণি দিয়ে অগ্রসর হবে।

পরে উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিমে পাশে রাখা হবে খালেদা জিয়ার কফিন। সেখানেই হবে খালেদা জিয়ার জানাজা।
জানাজাস্থলকে খালি রাখার জন্য যেসব ক্রসিংয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে—
ক. ফার্মগেট পুলিশ বক্স ক্রসিং
খ. ফার্মগেট ইন্দিরা রোড ক্রসিং
গ. বিজয় সরণি ক্রসিং
ঘ. উড়োজাহাজ ক্রসিং
ঙ. আসাদগেট ক্রসিং
চ. রাপা প্লাজা ক্রসিং
ছ. গণভবন ক্রসিং
যেসব জায়গায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে
১. ঢাকা মহানগরের যানবাহন পার্কিং করতে হবে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে।
২. ঢাকার বাইরে থেকে আগত জনসাধারণের বাসসহ অন্যান্য যানবাহন পার্কিং করতে হবে—
মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, শাহবাগ থানা এলাকা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৌবাজার/গরুর হাট এলাকা এবং পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের ৩০০ ফিট সার্ভিস রোড।

জানাজার পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এসময় বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপি মনোনীত রাজনীতিবিদরা উপস্থিত থাকবেন।
দাফনকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তির বাইরে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। দাফনকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হবে।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হৃদরোগ ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।
টিটি/ইএ/এএসএম