অর্থনৈতিক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবিস্মরণীয় অবদান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ফাইল ছবি

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি অর্থনীতিকে বাজারমুখী করতে নীতিগত সংস্কার গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বীমা খাত, শেয়ারবাজার ও তৈরি পোশাকশিল্পে তার সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।

ব্যাংক খাতে সংস্কার ও বেসরকারি ব্যাংকিংয়ের প্রসার

১৯৯১ সালে সরকার গঠনের পর বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেওয়া হয়।

এই সময় নতুন বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ে, ফলে আর্থিক সেবার পরিধি বিস্তৃত হয়। ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার, ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

বীমা খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ

খালেদা জিয়ার শাসনামলে বীমা খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ে। এর ফলে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা খাতে নতুন কোম্পানি গড়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ার ফলে গ্রাহকসেবা উন্নত হয় এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে।

শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ

১৯৯১-৯৬ মেয়াদে শেয়ারবাজারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কার্যক্রম জোরদার করা হয় এবং বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ে।

২০০১-২০০৬ মেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নীতিগত সহায়তা দেওয়া হয়, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হয়।

তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যাপক বিকাশ

বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে তৈরি পোশাকশিল্প (RMG) দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়। রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে পোশাক খাতকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিশেষ করে শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এ খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে শুল্ক ও কর ছাড়ের পাশাপাশি বন্ড সুবিধা ও রপ্তানি প্রণোদনা দেন তিনি।

এর ফলে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ে এবং লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান

পোশাকশিল্পের বিকাশের ফলে রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে রপ্তানি অর্থ দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ হয়।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ব্যাংক, বীমা ও পুঁজিবাজারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়, যা অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নেয়। তবে সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল বলেও মত দেন তারা।

সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বীমা ও শেয়ারবাজারে বেসরকারি খাতের বিকাশ এবং তৈরি পোশাকশিল্পকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইএআর/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।