জাতীয় কবি নজরুলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন/ছবি: জাগো নিউজ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই তাকে শায়িত করা হয়েছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শরিফ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ডাকসুর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাসহ হাদিরর পরিবার-পরিজন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকেল ৩টায় হাদির মরদেহ সমাধিসৌধে আনা হয়। দাফন শেষে হাদির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

কবরস্থানের আশপাশে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সোয়াটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এবং শাহবাগ মোড় থেকে সমাধিসৌধে প্রবেশের সড়ক জনসাধারণের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে।

এদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা পড়ান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। জানাজাপূর্ব বক্তব্য রাখেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

জানায় অংশ নিয়ে প্রধান উদেষ্টা বলেন, প্রিয় ওসমান হাদি তোমার কাছে ওয়াদা করতে আসছি, তুমি যা বলে গেছো, সেটা যেন পূরণ করতে পারি। শুধু আমরা নয়, বংশানুক্রমে দেশের সব মানুষ পূরণ করবে। তোমার মানবপ্রেম, ভঙ্গি মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সবাই গ্রহণ করেছে।

নজরুলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমান হাদি

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, লাখো লাখো মানুষ আজ এখানে উপস্থিত হয়েছে। পথে ঢেউয়ের মতো মানুষের স্রোত নেমেছে। বাংলাদেশজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। বিদেশিরাও হাদির কথা জানতে চায়।

জানাজার আগে শরিফ ওসমান হাদির বড় ভাই ও জানাজার ইমাম ড. মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক ভাই হত্যার বিচার চান।

মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ৭-৮ দিন হয়ে গেলো, খুনি দিবালোকের মধ্যে গুলি করে যদি পার পেয়ে যায় এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই। যদি বর্ডার ক্রস হয়ে যায়, ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে তারা কেমন করে গেলো? এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার ভাই শহীদ হয়েছে, তার শহীদি তামান্না ছিল। হয়তো আল্লাহ তার শহীদি মৃত্যু নসিব করেছেন।

‘কিন্তু আপনাদের কাছে আমি এই ঋণ কখনো ছাড়বো না, আমার ভাই শরিফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে দেখতে পারি। ৭-৮ দিন হয়ে গেলো, এখন পর্যন্ত আমরা কিচ্ছু করতে পারলাম না। এই দুঃখে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।’ যোগ করেন মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তারা ওসমান হাদিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল; আর তিনি হয়ে উঠলেন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে বড় প্রতীকে।

তিনি বলেন, দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে শাহাদতের মর্যাদা দান করেন এবং তার জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি আল্লাহ তায়ালা মার্জনা করেন। আল্লাহ তার কবরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের টুকরা বানিয়ে দেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন—আধিপত্যবিরোধী একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন—তার সেই স্বপ্ন পূর্ণতা দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে তৌফিক দান করুন।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।

এনএস/এফএআর/ইএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।